আফগানিস্তানের ভূমি ক্রমেই তালিবানের হাতে চলে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের ১৭টি প্রদেশের পতন হয়েছে। তার মধ্যে হেরাত সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার (১৩ আগস্ট) তালিবানের দখলে যায়। পাশাপাশি আফগানের বিশিষ্ট যোদ্ধা ইসমাইল খানকেও বন্দি করেছে তালিবান।
আফগান সরকারের হাত থেকে পরিস্থিতি বেড়িয়ে যাওয়া বিবেচনা করে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মোয়েদ ইউসুফ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, আরও সহিংসতা এড়াতে আফগান নেতাদের তালিবানদের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত মীমাংসায় পৌঁছানোর চেষ্টা করার আহ্বান জানাচ্ছে পাকিস্তান।
ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় উপদেষ্টা এই আহ্বান করেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন।
মোয়েদ ইউসুফ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস যদি তারা আলোচনায় বসতে পারে তাহলে এক ধরনের বন্দোবস্ত নিয়ে আসতে পারবে। আফগানরা যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেটা সম্মান করব। আর যদি আমরা আফগান সংকট নিয়ে রাজনৈতিক মীমাংসার প্রচেষ্টা না চালাই ইতিহাস আমাদের খুব খারাপভাবে বিচার করবে।’
ইউসুফ পাকিস্তানকে সমর্থন করে বলেন, অতীতে আফগান শান্তি প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। আমরা কেবল একটি বার্তা দিতে পারি- পাকিস্তান শান্তির জামিনদার হতে পারে না, কেবল সহযোগিতা করতে পারে।
পাকিস্তান বারবার আফগান সংঘাতে পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি জুনে ইসলামাবাদে পাক-আফগান দ্বিপাক্ষিক আলোচনার উদ্বোধনী অধিবেশনে বলেছিলেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ‘স্পষ্ট সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে।
আফগানের বিশিষ্ট কমান্ডার তালিবানের হাতে বন্দি
এদিকে, আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম হেরাত নগরীর বেশির ভাগই দখল করে নেওয়ার পাশাপাশি আফগানের বিশিষ্ট যোদ্ধা ইসমাইল খানকে বন্দি করেছে তালিবান। তালিবানের মুখপাত্র জাবিনুল্লাহ মুজাহিদ ইসমাইল খানকে বন্দি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসমাইল খানের বয়স ৭০ এর কোঠায়। তিনি আফগানিস্তানের সবচেয়ে বিশিষ্ট একজন কমান্ডার। হেরাত নগরীতে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। খবর রয়টার্সের।
তালিবান যোদ্ধারা বৃহস্পতিবার হেরাতের অধিকাংশ এলাকা দখলে নেয়। আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রদেশ তালিবানের দখলে যাওয়া সরকারের জন্য বিরাট ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছিল। এরপর শুক্রবার তালিবান হেরাতের স্থানীয় প্রশাসনকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। আত্মসমর্পণকারীদের তারা কোনো ক্ষতি করবে না বলে ঘোষণা দেয়। এরপর সেখানকার প্রশাসন- সেনা সদরদপ্তর, বিমানবন্দর এবং সরকারি স্থাপনাগুলোতে থেকে সেনা সরিয়ে নিতে রাজি হয়।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, হেরাত আফগান সরকারের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এখানকার যোদ্ধা ইসমাইল খান স্থানীয় যোদ্ধাদের একত্র করে তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার তিনি তালিবানের হাতে বন্দি হলেন।
তালিবানের সঙ্গে এক চুক্তি মোতাবেক- হেরাতের বর্তমান গভর্নর, কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ ইসমাইল খানকে তালিবান যোদ্ধাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে চুক্তিতে কী ছিল সেটার বিস্তারিত জানা যায়নি।
এদিকে আরেকটি খবরে বলা হয়েছে, ইসমাইল খান তার যোদ্ধাদের নিয়ে তালিবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এরপর তালিবানরা তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে।
আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয়ের সতর্কবার্তা জাতিসংঘের
অন্যদিকে আফগানিস্তানে অনাহারী মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবং তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে ঘরবাড়ি ছেড়ে হাজারো মানুষের পলায়নের ফলে দেশটিতে ‘মানবিক বিপর্যয়’ ঘনিয়ে আসার সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ।
আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা জানিয়ে জাতিসংঘর এক ভাষণে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থম্পসন ফিরি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটা এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ অচিরেই ক্ষুধাপীড়িত হওয়ার আশঙ্কা করছি। পরিস্থিতি যা দেখা যাচ্ছে তাতে সামগ্রিকভাবে মানবিক বিপর্যয়ের আলামতই পাওয়া যাচ্ছে।’ খবর রয়টার্সের।
জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের মুখপাত্র জেনস লার্কে বলেন, তালিবানের হামলার মুখে হাজার হাজার মানুষ পল্লী এলাকাগুলো থেকে পালিয়ে রাজধানী কাবুল ও অন্যান্য শহর এলাকায় চলে যাচ্ছে আশ্রয়ের খোঁজে। তারা খোলা আকাশের নিচে, পার্কে, জনসমাগম এলাকায় ঘুমাচ্ছে। তাদের জন্য একটি আশ্রয় খুঁজে বের করাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।
পলায়নপর আফগানদের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকে সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। কাবুলের উপকণ্ঠে অস্থায়ী শিবির স্থাপন করা হয়েছে।
খাদ্য, বাসস্থান, নিরাপত্তা – সবদিক দিয়েই আফগানিস্তান দুর্বল হয়ে পড়েছে। আফগান সরকার তালিবান গোষ্ঠীর সাথে সমঝোতাের আলোচনাতেও বসেছে ৩ বার। পরিস্থিতি বিবেচনার করে তারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে চাইছে। তবে তালিবান এখনও এ বিষয়ে মুখ খোলেনি।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১২৩৯
আপনার মতামত জানানঃ