একে একে আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানীগুলো পতন হতে শুরু করেছে তালিবানের হাতে। আফগানিস্তানে গজনি শহর দখলসহ এ নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির ৩৪টি প্রদেশের ১০টির রাজধানী তালিবানের নিয়ন্ত্রণে গেল। আজ বৃহস্পতিবার এক আফগান আইনপ্রণেতা ও তালিবানের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
বেকায়দায় পড়ে এবার তালিবানের কাছে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে আফগান সরকার। কাতারের দোহায় তালিবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে আফগান সরকারের শান্তি আলোচনা চলছে। আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় তৃতীয় দিনের মতো আলোচনায় বসলো দুই পক্ষ। আফগান সরকারের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা অনলাইন এ তথ্য জানিয়েছে।
আল-জাজিরার সাংবাদিক জানিয়েছেন, আফগান সরকার তালিবানের কাছে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কীভাবে এই ক্ষমতা ভাগাভাগি হবে কিংবা কে কতটুকু অংশ শাসন করবে তার বিস্তারিত জানা যায়নি। এ ব্যাপারে তালিবানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
এদিকে তালিবানের দখল নেয়া হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী ও আফগানিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম শহর লস্কর গাহেও তুমুল লড়াই চলছে তালিবান ও সরকারি বাহিনীর। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে সশস্ত্র তালিবান যোদ্ধারা। তীব্র আক্রমণের মুখে তালিবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন শহরটির বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও।
কান্দাহার কারাগারেও তাণ্ডব চালিয়েছে তালিবান। বিদ্রোহীদের একটি দল কান্দাহার কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে কয়েকশ’ বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে। কারাগারটিতে এর আগেও হানা দিয়েছিল তালিবান। সেবারও অসংখ্য বন্দির পালানোর ঘটনা ঘটেছিল।
বিবিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ২০০৫-২০১৯ সাল অব্দি ১৪ বছরে প্রতিদিন গড়ে ৫ জন শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। জাতিসংঘের সূত্র মতে, এই সময়ে ২৬ হাজার ২৫ জন শিশু নিহত বা বিকলাঙ্গ হয়েছে যুদ্ধের কারণে।
তবে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে শিশুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত কান্দাহার, খোস্ত ও পাকতিয়া প্রদেশে তিনদিনেই মৃত্যু হয়েছে ২৭ শিশুর।
মূলত, রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের মাঝে পড়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে দেশটির শিশুরা। গত মাসে সবমিলিয়ে লড়াইয়ের জেরে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১ হাজার নিরীহ মানুষ।
এক রিপোর্টে ‘ইউনিসেফ’ স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছে যে আফগানিস্তানে প্রতিদিন শিশুদের উপর নিপীড়নের মাত্রা বাড়ছে। ইউনিসেফের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত তিন দিনে কান্দাহার, খোস্ত ও পাকতিয়া প্রদেশে ২৭ শিশু নিহত হয়েছে। ওই তিন অঞ্চলে ১৩৬ শিশু আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে জাতিসংঘ হুঁশিয়ার করেছে যে, আফগানিস্তান আরেকটি বড়ধরনের মানবিক সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এবছর এ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার আফগান। বিদেশী সৈন্যরা আফগানিস্তান ত্যাগ করার সাথে সাথে তালিবানরা দেশের বিভিন্ন অংশে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিদিন তারা নতুন নতুন এলাকা দখল করে নিচ্ছে। প্রতি দিন শত শত আফগান ইরান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে তুরস্কে ঢুকছে। তাদের লক্ষ্য যুদ্ধ ও দারিদ্রতা থেকে বাঁচা। কিন্তু লক্ষ লক্ষ সিরিয়া শরণার্থীকে ইতোমধ্যেই আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক। এখন নতুন করে আরেকটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে আসা শরণার্থীর এই ঢল নিয়ে তুরস্কে কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী খালিদ পায়েন্দা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, তালিবান আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ কাস্টমস দখল করে নেওয়ার পর এই ঘটনা ঘটেছে।
অর্থমন্ত্রীর মুখপাত্র মোহাম্মদ রাফি তাবে ব্লুমবার্গকে বলেন, তালিবানের কাস্টমস দখলের পর আফগানিস্তানের শুল্ক হ্রাস পাচ্ছে। এ কারণে অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। তিনি আরও জানান, আফগানিস্তানের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা অবনতির কারণে স্ত্রীকে নিয়ে অর্থমন্ত্রী খালিদ পায়েন্দা বিদেশে চলে গেছেন।
সবদিক দিয়ে ক্রমেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে আফগানিস্তানের। কুল কিনারা হারিয়ে ফেলছে আফগান সরকার। এতে বাধ্য হয়েই তালিবানকে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেবার প্রস্তাব দিয়েছে আফগান সরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২১১৮
আপনার মতামত জানানঃ