আফগানিস্তানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আরও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে দিনদিন। এবার সেখানকার রাজধানী কাবুলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়িকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা ও গুলি ছুড়লে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাল্টাগুলি সংঘর্ষে নিহত হয় ৪ জন।
এদিকে হেলমান্দের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ও তালিবানের মধ্যে সম্প্রতি ব্যাপক লড়াইয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। তাই আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্করগাহ ছাড়তে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলা
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। একই সময় তার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় বন্দুকধারীরা। এ সময় আফগানিস্তানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে চার বন্দুকধারী নিহত হয়।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) মধ্যরাতে এ হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তবে হামলার সময় বাড়িতে ছিলেন না প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদি। হামলার পর বাড়িতে থাকা তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আফগানিস্তানের বিভিন্ন শহরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালিবান যোদ্ধাদের চলমান তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে সহিংসতা বন্ধ করে দ্রুত এর কোনো সমাধানের আহ্বান করা হয়েছে।
এদিকে এ হামলার পর বিসমিল্লাহ খান এক টুইটবার্তায় বলেন, চিন্তার কিছু নেই। সব ঠিকঠাক আছে।
বিস্ফোরণের কয়েক মিনিট পর কয়েক হাজার আফগান বেসামরিক আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে রাজপথে নামেন। তারা তালিবানের বিরুদ্ধে আফগান সরকারের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এই মিছিলে নারী ও পুরুষরা অংশগ্রহণ করছেন। এসময় তাদের হাতে মোমবাতি ও আফগানিস্তানের পতাকা ছিল। অনেকে বাড়ির ছাদে জড়ো হন। তারাও ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। গত সোমবার একই দৃশ্য দেখা যায় আফগানিস্তানের হেরাত শহরে। সেখানেও তালিবান ও আফগান বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে।
অবরুদ্ধ লস্করগাহ ছাড়তে জনগণের প্রতি আহ্বান
হেলমান্দের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ও তালিবানের মধ্যে সম্প্রতি ব্যাপক লড়াই চলছে। এ লড়াই গত সোমবার ও মঙ্গলবার এ দুদিনে ব্যাপক আকার ধারণ করে। সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। আর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের হামলায় তালিবানের ৭৭ জন নিহত হয়েছেন।
আফগানিস্তানের এ এলাকায় সরকারি বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেনারেল সামি সাদাত। তিনি লস্করগাহের বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘দয়া করে যত দ্রুত সম্ভব এ এলাকা ছেড়ে চলে যান, যাতে আমরা অভিযান শুরু করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, এভাবে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া কঠিন। এটা আমাদের জন্যও কঠিন। আপনারা যদি অল্প কয়েক দিনের জন্য বাস্তুচ্যুত হন, তবে আমাদের ক্ষমা করবেন।’ খবর এএফপির।
হেলমান্দের রাজধানীতে প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। তারাও জীবন নিয়ে শঙ্কিত। এ নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন বাসিন্দারা। লস্করগাহের এক বাসিন্দা সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘এখানে তালিবান আমাদের প্রতি কোনো অনুকম্পা দেখাবে না। আর সরকারি বাহিনীও তাদের হামলা বন্ধ করবে না।’ নিরাপত্তার স্বার্থে বিবিসি ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি। এমন নাম প্রকাশ না করা আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘রাস্তায় সেনারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা ঠিক জানি না, এরা সরকারি বাহিনী, নাকি তালিবান।’ দুই পক্ষের লড়াই থেকে বাঁচতে অনেকেই শহর ছেড়ে হেলমান্দ নদীতীরবর্তী এলাকায় অবস্থান নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ