আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ করে তা নিয়ন্ত্রণে নিতে শুরু করা সশস্ত্র দল তালিবানের অগ্রসর হওয়ার জেরে দেশটির প্রাদেশিক রাজধানী শহর কান্দাহার, লশকর গাহ ও হেরাতসহ বিভিন্ন স্থানে আফগান বাহিনীর সাথে তুমুল লড়াই চলছে তালিবানগোষ্ঠীর। এতদিন সামরিক লোকেরা লক্ষ্য থাকলেও এখন বেসামরিক লোকেরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছে। যারা যুদ্ধের সাথে জড়িত না তাদেরও হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তালিবানের বিরুদ্ধে।
আজ মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই দূতাবাস পৃথক টুইট বার্তায় গজনির মালিস্তানে তালিবানের বিরুদ্ধে ৪০ জনের বেশি বেসামরিক লোক হত্যার অভিযোগ করে। তবে কাতারের দোহাভিত্তিক তালিবান প্রতিনিধি দলের সদস্য সুহাইল শাহিন এই অভিযোগকে অস্বীকার করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে জানিয়েছেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এর আগে স্পিন বোলদাকে তালিবান যোদ্ধাদের প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী আফগানিস্তান ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন।
প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, তালিবান যোদ্ধারা স্পিন বোলদাক জেলা দখলের পর সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করছে। এমনকি যুদ্ধে যাদের লড়াইগত কোনো ভূমিকা ছিলো না, তাদেরও হত্যা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, স্পিন বোলদাকে অন্তত ৪০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে আফগানিস্তানের হেলমানদ প্রদেশের রাজধানী লশকর গাহে তালিবানের সাথে প্রায় এক সপ্তাহ লড়াই অব্যাহত রেখেছে আফগান সামরিক বাহিনী।
হেলমানদের সামরিক দফতর জানায়, আফগান বাহিনী ভূমি ও আকাশ থেকে হামলা প্রতিরোধ করছে। সোমবার পর্যন্ত হেলমানদের ১৫ জেলার মধ্যে ১২ তালিবান যোদ্ধারা দখল করে নিয়েছে বলে নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে। লশকরগাহে সংঘর্ষের কারণে হেলমানদ থেকে সবধরনের গণমাধ্যম সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে কান্দাহার ও হেরাতেও এক সপ্তাহের বেশি তালিবান ও আফগান সামরিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছে।
আফগানিস্তানে দুই দশক ধরে চলমান যুদ্ধের অবসানে গত কয়েক বছর সংঘর্ষরত তালিবানের সাথে আলোচনা শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট। দীর্ঘ আলোচনার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবান আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাতারের রাজধানী দোহাতে এক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির অধীনে তালিবান সহিংসতা ছেড়ে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণে সম্মত হয়। বিনিময়ে দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল বিদেশী বাহিনীকে এই বছর ১ মে সময়সীমায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে গত ১৪ এপ্রিল হোয়াইট হাউজে এক ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন করে এই সময়সীমা ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ান। পরে ৮ জুলাই অপর এক ঘোষণায় এই সময়সীমা কমিয়ে এনে ৩১ আগস্ট নির্ধারণ করেন বাইডেন। তার ঘোষণা অনুসারে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ৩৫টি দেশের নয় হাজার পাঁচ শ’ ৯২ সৈন্য প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ৯৫ ভাগ সৈন্যকে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করানো হয়েছে।
মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাথে তালিবানের সমঝোতায় আসার কথা থাকলে এখনও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। সমঝোতায় না পৌঁছানোর জেরে তালিবান আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে। সমঝোতা না হওয়ার জন্য আফগান সরকারকে অভিযুক্ত করছে তালেবান।
সমঝোতা না হওয়ার জেরে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সুযোগে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে তালিবান।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২২০৯
আপনার মতামত জানানঃ