বাংলাদেশি শ্রমিকদের সমুদ্রপথে বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। দেশের আইন অনুযায়ী তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়া তাদের আর কোনো বহির্গমন পথ নেই। প্রতারকচক্র সবকিছু জেনেও সাধারণ মানুষকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে সমুদ্রপথে পাঠানোর নামে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে।
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে যাত্রা করে স্বপ্নের দেশে নোঙ্গর করে না অনেক সমুদ্রযান। দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক মানুষের জীবন হয় বিপন্ন। টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে মাঝপথেই প্রতারকরা পালিয়ে গেছে, এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।
অনেক ক্ষেত্রে আটকে রেখে পরিবারের সদস্যদের কাছে দাবি করা হয় মুক্তিপণ। মেটাতে না পারলে চলে অমানুষিক অত্যাচার। অনেককে বিক্রি করে দেয়া হয় দাসশ্রমিক হিসেবে।
প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয় দালালের হাত ধরে ইতালি ও স্পেন প্রবেশের চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু। খবর আসে, আমেরিকায় যাওয়ার পথে বনে-জঙ্গলে দালালের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। ইউরোপে ঢোকার আশায় বলকানের বরফঢাকা জঙ্গলে হাজারো মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার সংবাদও আসে। সম্প্রতি খবর হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দালালের খপ্পরে পড়া হাজারো মেয়ে ভারতে পাচার হয়ে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
গত সপ্তাহে ১৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে ভূমধ্যসাগরে ডুবে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ পথে ইউরোপ-আমেরিকা যাওয়ার প্রবণতা। বন্ধ হচ্ছে না প্রলোভনে পড়ে ভারত, দুবাই যাত্রা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর নাগরিকদের চেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি এখন ইউরোপ-আমেরিকায় শরণার্থী হতে আবেদন করছেন। সাগরপথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকারীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা এখন শীর্ষে!
এমন পরিস্থিতিতে আজ ৩০ জুলাই পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস। মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের দুঃসহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সমাজকে সচেতন করার লক্ষ্যে এবারের প্রতিপাদ্য ‘ক্ষতিগ্রস্তদের কণ্ঠস্বর পথ দেখায়’।
২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এক প্রস্তাবের মাধ্যমে প্রতি বছর ৩০ জুলাই দিনটিকে বিশ্ব মানবপাচার বিরোধী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
জাতিসংঘের প্রস্তাবে বলা হয় যে, মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং তাদের অধিকারগুলোর প্রচার ও সুরক্ষার লক্ষ্যে এমন একটি দিবসের প্রয়োজন ছিল।
শীর্ষে বাংলাদেশ
মহামারির মাঝেও উত্তাল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে গত ২২ জুলাই প্রাণ গেলো ১৭ অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশির। নৌকায় করে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে সাগরে ডুবে মারা যান তারা। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের আরও ৩৮০ অভিবাসন প্রত্যাশীকে।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার এমন ঘটনা চলতি মাসেই বেশ কয়েকটি। আর যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই বেশি। এর আগে গত ২৪ জুন ২৬৭ জনকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। যাদের ২৬৪ জনই ছিল বাংলাদেশি।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের তালিকায় শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। ২১ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রপাড়ি দিয়েছে বিভিন্ন দেশের ৪১ হাজার ৭৭৭ জন। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আছে বাংলাদেশি। গত ১০ জুনও ১৬৪ বাংলাদেশিকে তিউনিসিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের তালিকায় শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। ২১ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রপাড়ি দিয়েছে বিভিন্ন দেশের ৪১ হাজার ৭৭৭ জন। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আছে বাংলাদেশি।
এর আগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় ১৮ মে ৩৬ জন, ২৭ ও ২৮ মে ২৪৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। এ বছর এভাবে মোট তিন হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার বা আটক করা হয়।
ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত নানা দেশের ২২ লাখ ২৪ হাজার ২৪৫ জন মানুষ সাগরপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসে। একই সময়ে এ পথে আসতে গিয়ে মারা গেছে ২১ হাজার ৭০৭ জন।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের তথ্য অনুযায়ী, যত জন এভাবে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছেন তার সাড়ে ১৪ শতাংশই ছিল বাংলাদেশি।
ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ে দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে এভাবে ৬০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছে।
মানব পাচারে বাংলাদেশ কেন শীর্ষে?
মানব পাচারের দিক থেকে আন্তজার্তিক সংস্থার তালিকাতে কেন বাংলাদেশ শীর্ষে? আমরা যদি এর কারণ খুঁজি তাহলে সর্বপ্রথম যে কারণটি আসবে তা হলো বেকারত্ব। দেশের বিপুল পরিমাণ বেকার ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ধারণা, বিদেশে গেলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। পারিবারিক সচ্ছলতা আসবে এই বিশ্বাস নিয়ে অবৈধ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় তারা। তাদের এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে স্বার্থ হাসিল করে পাচারকারীরা।
নারীদের ক্ষেত্রেও একইভাবে বিভিন্ন এলাকার তালাকপ্রাপ্ত, অল্প বয়স্ক বিধবা, কাজের সন্ধান করছে এমন নারীদের টার্গেট করে। অনেক সময় অপহরণ বা প্রেমের ফাঁদে ফেলে পাচার করে দেশে-বিদেশে। আবার সীমান্তবর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতির জন্যও মানব পাচার হয়।
সংবাদ মাধ্যমে মানব পাচার রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, সুমদ্রে টহল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বোট-ট্রলার নেই। কিছুক্ষেত্রে স্থানীয়দের থেকে ভাড়া করে অভিযান চালানো হয়।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সূত্র মতে কক্সবাজার ও টেকনাফের ৮০টি পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচার হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার জন্য জন্য মানব পাচার কমানো যাচ্ছে না। মানব পাচারকারী চক্রের সাথে পুলিশ, সীমান্ত রক্ষীবাহিনী, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার হাত আছে বলে মনে করা হয়।
তরুণরাই বেশি আগ্রহী
মূলত মহামারির কারণে বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট বন্ধ থাকার সুযোগ নিচ্ছে মানবপাচারকারী চক্র। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ভিজিট ভিসায় দুবাই, এরপর ইরান হয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করা হয়।
আটক হওয়ার পর ফেরত আসা বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুবাই ও ওমানে নতুন আসা বাংলাদেশি তরুণরাই মূলত পাচারকারীদের প্রধান টার্গেট।
সমুদ্র পাড়ি দেওয়া এসব ঘটনা পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২৬ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা ইউরোপে ঢুকতে বেশি মরিয়া থাকে।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্যমতে, গত কয়েকবছরে ইউরোপ ও লিবিয়া থেকে ফেরত আসা ২ হাজার ২৮৪ জনের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা— এসব জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি লোক এভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। একেকজন খরচ করেছেন তিন থেকে ১৫ লাখ টাকা।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী তার গবেষণার বরাতে বলেছেন, করোনার কারণে বৈধ পথে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার সুযোগ কমেছে। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগচ্ছে দালালরা। বৈধ পথ সংকুচিত হওয়ায় তরুণদের অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা করতে প্রলুব্ধ করছে তারা। তবে করোনাকালে মানব পাচার বেড়েছে কিনা তা জানতে জরিপ প্রয়োজন।
পাচারের প্রচার হয় টিকটক-ফেসবুকে
মানবপাচারের অন্যতম প্রচার মাধ্যম এখন টিকটক, লাইকি, হোয়াটস অ্যাপ। এমনকি ফেসবুক ব্যবহার করেও পাচারের ঘটনা ঘটছে। লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকে পাচারকারীদের ভাষায় বলা হয় ‘গেম’। এই ‘গেম’ এর খবর ফেসবুকে আসে বিভিন্ন গ্রুপে। ‘গেম’ হোক আর না হোক, ছবি পোস্ট করে প্রলুব্ধ করা হয়। লোভে পড়ে পা বাড়ায় আগ্রহীরা। বড় জাহাজের কথা বলা হলেও ওঠানো হয় নৌকা কিংবা রাবারের তৈরি উদ্ধারকারী বোটে। শুরু হয় অনিশ্চিত এক যাত্রা।
নতুন করে সামনে এসেছে ভারতে কিশোরী-তরুণীদের পাচারের বিষয়টি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণায় দেখা গেছে, পাচারকারীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সংকটে থাকা পরিবারের শিশু-কিশোরীদের পাচারের জন্য ফেসবুক, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টার্গেট করা হয়। ভারতে চাকরি, অভিনয় বা মডেলিংয়ে সুযোগ করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যৌন পেশায় বাধ্য করা হয়।
দেশের বিপুল পরিমাণ বেকার ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ধারণা, বিদেশে গেলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। পারিবারিক সচ্ছলতা আসবে এই বিশ্বাস নিয়ে অবৈধ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় তারা। তাদের এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে স্বার্থ হাসিল করে পাচারকারীরা।
ভারতে পাচার হওয়া প্রায় ২ হাজার নারীকে গত ১০ বছরে আইনি প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম পাচারের শিকার ৬৭৫ জন নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৬ থেকে ২০ বছরের কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি পাচারের শিকার। এরপরই আছে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সীরা। তারা বেশিরভাগই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার বাসিন্দা।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, ২০১২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মানবপাচারের যেসব মামলা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, প্রায় দুই হাজার নারী মানবপাচারের শিকার হয়েছেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২০ সালে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকালে উদ্ধারকৃত নারীর সংখ্যা ৩০৩ জন।
সীমান্তে পাচারকারী চক্রের অর্ধশতাধিক ‘সেফ হোম’
পাচারের শিকার হওয়া হাজারের বেশি নারী ভারত থেকে ফিরে এসেছেন। এখনো প্রায় ১০ হাজার নারী ভারতের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন। এসব নারীর অধিকাংশকেই নানা ফাঁদে ফেলে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যৌনকর্মে বাধ্য করা হয়েছে। এই অপকর্মের জন্য দুই দেশে কয়েক স্তরে গড়ে উঠেছে বিরাট পাচারকারী চক্র। পাচারের পুরো প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে সীমান্তের এপার-ওপারে তৈরি করা হয়েছে অর্ধশতাধিক ‘সেফ হোম’।
ভারতে নারী পাচার নিয়ে প্রায় দুই মাস তদন্ত করে এই চিত্র পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত মে মাসের শেষ দিকে ভারতের বেঙ্গালুরুতে এক বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এ বিষয়ে একযোগে অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশ ও র্যাব।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাচারের জন্য সাধারণত উঠতি বয়সী মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়ে থাকে। ফেসবুকে বন্ধু হয়ে, আবার অন্য কোনোভাবে পরিচিত হয়ে দীর্ঘদিন যোগাযোগ রেখে সম্পর্ক গড়ে তোলেন পাচারে জড়িত ব্যক্তিরা। পরে ভালো বেতনে সুপারশপ, শপিং মল বা বিউটি পারলারে চাকরির কথা বলে তাদের নেওয়া হয় সীমান্তের ওপারে। অনেক তরুণীকে ফাঁদে ফেলা হয় টিকটক ভিডিও তৈরির নামে। একবার সীমান্ত পার করতে পারলেই জিম্মি করা হয় এসব নারীকে। এরপর তাদের দিয়ে করানো হয় অবৈধ ব্যবসা।
এভাবে ভারতে নারী পাচারে বাংলাদেশের ভেতরে সক্রিয় রয়েছে চারটি চক্র। আর সীমান্তের ওপারে কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতে রয়েছে তিনটি চক্র। সেখানে ভারতীয়রা নেতৃত্ব দিলেও বাংলাদেশিরাও সম্পৃক্ত রয়েছেন। সব কটি চক্রের সমন্বয়ক হিসেবে এসেছে এক বাংলাদেশির নাম।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের দেশে মূলত একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলে তারপর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলে আলোচনা, সমালোচনা, নীতিনির্ধারকদের টকশো এবং সুশীলদের পরামর্শ। কিন্তু কিছুদিন পরে আরো একটি ঘটনার চাপে ঢাকা পড়ে যায় পূর্ববর্তী ঘটনা। আর এভাবেই অপরাধীরা আইনের থেকে পার পেয়ে যায়।
তারা বলেন, মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারে বিলম্ব না করে দ্রুত শাস্তি দেওয়া উচিত। বিচার বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাচারকারীদের আটক করতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
তারা বলেন, মানব পাচারের আরো একটি কারণ হলো অসচেতনতা। পাচার হওয়া ভিক্টিম যারা ফিরে আসে তাদের নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা ভিক্টিমদের বক্তব্য, তাদের দুর্দশার কথাগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের সহজ সরল মানুষের মাঝে তুলে ধরার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা যেতে পারে। যে এলাকা থেকে মানব পাচার বেশি হচ্ছে সেই এলাকা চিহ্নিত করে সচেতন করা। বেকারত্ব কমাতে যুবক ও মহিলাদের কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধি করে নিজ দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। জনশক্তি রপ্তানিতে সরকারি কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে উন্নত দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বাড়ানো। এছাড়া উপকূল ও সীমান্ত এলাকাতে পর্যাপ্ত কোস্ট গার্ড ও সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে। সমুদ্রসীমা সুরক্ষার জন্য আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন দরকার বলে মনে করেন তারা।
তারা বলেন, সমুদ্র পথে টহল বাড়াতে হবে। টেকনাফসহ সীমান্ত এলাকাগুলিতে ওয়াচ-টাওয়ার করে মানুষদের সার্বক্ষণিক চলাচল পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। মানব পাচারের এই চক্র ভেঙে দিতে রিসিভিং কান্ট্রির অনেক ভূমিকা পালন করতে হবে। এই বিষয়ে সরকারের আরো বেশি সচেতন হওয়া এবং সুনজর দেওয়া উচিত। এছাড়া জল, স্থল ও আকাশ পথে নজরদারি বাড়াতে হবে। ২১ শতক, সভ্য এক ধরণীতে দাস প্রথা বড়ই বেমানান। মানব পাচার জঘন্যতম একটি ব্যবসা। এটি নির্মূলের মাধ্যমে আমরা আধুনিক দাস প্রথা থেকে মুক্তি পেতে পারি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪১
আপনার মতামত জানানঃ