তালিবানরা জঙ্গি নয়; সাধারণ নাগরিক বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) গণমাধ্যমের দেওয়া প্রতিবেদনে পিবিএস নিউজআওয়ারে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন দাবি করেন।
ওই সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, তালিবানরা জঙ্গি নয়। পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী থাকেন। ওই শরণার্থী শিবিরে তালিবানরা থাকলে পাকিস্তান কি তাদের খুঁজে বের করে হত্যা করতে পারে?
এ সময় তালিবানদের সাহায্য করতে ১০ হাজার পাকিস্তানি সেনা আফগানিস্তানে গেছে কী না জানতে চাইলে ইমরান খান বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন, এসব একদম ভুয়া খবর। উল্টো প্রশ্ন করেন, এ ব্যাপারে কেউ প্রমাণ দেখায় না কেন?
যদিও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামিক আলেমরা তালিবানকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং অর্থ সহযোগিতার আহ্বানও জানাচ্ছেন৷ কোয়েটা এবং বালোচিস্তান প্রদেশের পিশিন শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে, তাদের এলাকায় তালিবানপন্থিদের কার্যক্রম জোরদার হয়েছে৷
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের আদিবাসী এলাকায় বিরোধী দলের আইনপ্রণেতা মোহসিন দাওয়ার বলেন, ‘‘কোয়েটাসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে তালিবান মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ রাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব নয়৷’’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় স্থানীয়দের অনেকে তালিবানকে সমর্থন করেন৷ কিন্তু রাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া মিছিল-সমাবেশ আয়োজন করা সম্ভব না৷ শুরুর দিকে বিভিন্ন মসজিদে আলেমরা আফগান তালিবানের জন্য অর্থ সহায়তা চাইতেন৷ এখন তারা বাসায় বাসায় গিয়ে ‘আফগান জিহাদের’ জন্য অর্থ চাইছেন৷’’
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের আদিবাসী এলাকায় বিরোধী দলের আইনপ্রণেতা মোহসিন দাওয়ার বলেন, ‘‘কোয়েটাসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে তালিবান মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ রাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব নয়৷’’
এদিকে, সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়ে ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানে সামরিক সমাধান খুঁজতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছিল। পরে অবশ্য তারা রাজনৈতিক সমাধানে আসার চেষ্টা করে। পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রধান দাবি করেন, ‘তালিবানসহ সমস্ত পক্ষকে নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরি করাটাই আফগানিস্তানের পক্ষে মঙ্গলদায়ক।’
তবে ইমরান খান যতই তালিবানদের ‘সাধারণ নাগরিক’ বলে দাবি করুন, মার্কিন সেনা সরতে শুরু করার পরই আফগানিস্তানকে রক্তাক্ত করতে শুরু করে তারা। দেশটির প্রায় চারশো জেলার মধ্যে দুশোটির বেশি জেলা দখল করেছে বলে দাবি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটির।
সম্প্রতি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, তালিবান সাধারণ মানুষকেও আক্রমণ করছে। প্রকাশ্য রাস্তায় তাদের হত্যা করা হচ্ছে।
কান্দাহার ও হেরাতের মতো শহরগুলিতে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে জেহাদিরা। সাধারণ মানুষকে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। দেশটির কর্মকর্তাদের মারফত জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে দেড় লাখের বেশি মানুষ। তবে শুধু কান্দাহার না, দেশ ত্যাগের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে অধিকাংশ মানুষ।
দেশের জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী নজর মহম্মদকে গাছে বেঁধে গলা কেটে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। সেই ভয়ংকর মৃত্যুর ভিডিও টুইটারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমশ তালিবানদের ভয়াবহতার স্বরূপ ফুটে উঠছে এই ধরনের ঘটনা সামনে আসায়।
সরকারি কর্মী অথবা সরকারের কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে তালিবান। তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সে দেশের জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী নজর মহম্মদকে গাছে বেঁধে গলা কেটে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। সেই ভয়ংকর মৃত্যুর ভিডিও টুইটারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমশ তালিবানদের ভয়াবহতার স্বরূপ ফুটে উঠছে এই ধরনের ঘটনা সামনে আসায়।
দেশটিতে আফগান সরকারি বাহিনী ও তালিবানের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গোলাগুলিতে সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার সংখ্যা আরও বেড়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে বিস্ফোরক হামলায় ৫০১ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছন এক হাজার চারশো ৫৭ জন।
তবে ক্রমশ অভিযোগ দৃঢ় হচ্ছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অনেক আফগান ও পশ্চিমা রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে তালিবানকে নিরাপদ আশ্রয় ও সামরিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন৷ এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের অবস্থানের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আম্বর রহিম শামসি বলেন, তালিবানপন্থি সমাবেশ থেকে দুটি বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷ সামরিক অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিহত করতে রাষ্ট্রের অক্ষমতা এবং অনিচ্ছা। রাজনৈতিক ও কৌশলগত দ্বন্দ্বের কারণে সরকার মূলধারার ইসলামি মাদ্রাসা ও চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলির বিষয়ে তেমন কিছু করতে পারেনি৷
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছে এক কথা, তবে মাঠের বাস্তব চিত্র আলাদা৷ যদিও এটি সত্য যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার ফলে তালিবানের কার্যক্রম বৈধতা পেয়েছে৷ কিন্তু তবে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকেই এসব ঘটনার ফল ভোগ করতে হবে৷
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০০৫
আপনার মতামত জানানঃ