গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছুটি নিয়ে বরাবরই অনিশ্চিয়তা তৈরী হয়ে আসছে। লক ডাউনে গার্মেন্টস খোলা থাকবে নাকি বন্ধ থাকবে সে নিয়ে বরাবরই দোটানায় ছিলো সরকার। যানবাহন বন্ধ রেখে গার্মেন্টস খোলা রাখার মত ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে শ্রমিকদের।
এবারও গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছুটি কয়দিন থাকবে এর উত্তর জানেন না খোদ গার্মেন্টস মালিকরা। শ্রমিকরাও জানে না তাদের ছুটি কয়দিন। কোনও শ্রমিক জানে না তাদের কবে কাজে ফিরতে হবে। কোনও কোনও কারখানা শ্রমিকদের ৫ দিন ছুটি দিয়েছে। কোনও কোনও কারখানা ১০ দিন ছুটি দিয়েছে। তবে অধিকাংশ কারখানা থেকে শ্রমিকদের বলা হয়েছে এই মাসের ২৭ তারিখের পর যেকোনও দিন কারখানা খোলা হতে পারে। বেশকিছু কারখানার শ্রমিকদের সাত দিন ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দশ দিন ছুটি দিয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকরা মনে করছেন, ১ আগস্ট তাদের কাজে যোগ দিতে হতে পারে। সেভাবেই সব শ্রমিকদের প্রস্তুত থাকার জন্য কারখানা থেকে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা মালিকরা কেউ বলতে পারছি না শ্রমিকরা কবে কাজে ফিরবে। কারণ, ছুটি তিন দিনের হতে পারে, ১৭ দিনেরও হতে পারে। আমি আমার শ্রমিকদের বলেছি, ঈদে বাড়ি না যেতে। যখন সরকারের নির্দেশনা পাবো, তখন কারখানা খোলা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা আশা করছি, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হলে ৫ আগস্টের আগেই আমরা কারখানা খোলার সুযোগ পাবো।’
প্রসঙ্গত, বিধিনিষেধ চলাকালে কারখানা বন্ধ থাকার কথা থাকলেও গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল কারখানার মালিকরা ওই সময় কারখানা খোলা রাখার জন্য গত বুধবার থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত যদি সরকার এতে রাজি না হয়, তবে অন্তত ৫ আগস্টের বদলে ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
এদিকে পোশাক শ্রমিকরা তাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদুল আযহা উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন কিনা— সেই সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারছেন না। কারণ ঈদের ছুটি কত দিনের হবে, সে ব্যাপারে আজও নিশ্চিত নন অনেকে। আর ১ আগস্ট কারখানা খুললে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকরা লকডাউন এর কারণে তারা ফিরতে পারবেন না।
যদিও গত বছর ছুটি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ার পর ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে কারখানায় ফিরতে হয়েছে অনেক শ্রমিককে । ফলে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় এবার ঈদে অনেকে ঢাকাতেই থেকে যাবেন।
অবশ্য এর আগে ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে সময় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা চালু রাখার দাবি জানিয়েছিলেন মালিকেরা। তবে সরকার সোমবার পর্যন্ত গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখা নিয়ে নতুন করে কোনও নির্দেশনা দেয়নি। যদিও এদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত মিল-কারখানা, কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প কারখানার কার্যক্রম কঠোর বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে।
অবশ্য আশা ছাড়ছেন না পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা। তাদের প্রত্যাশা, করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলার সুযোগ দেবে সরকার। এমন বার্তা নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা। অধিকাংশ কারখানার মালিক ঈদের সাধারণ ছুটি দিয়েছেন চার থেকে সাত দিন। তবে ছুটির নোটিশে তারা উল্লেখ করছেন, ঈদের ছুটির পর করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে কারখানা বন্ধ থাকবে। পরবর্তী সময়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ীই কারখানা চালু করা হবে।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে চলতি বছরের এপ্রিলে সরকার বিধিনিষেধ দিলেও রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ পায়।
সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত পরিসরের ও পরে ১ জুলাই থেকে চলমান কঠোর বিধিনিষেধেও পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু থাকে। তবে গত মঙ্গলবার জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২৩ জুলাই ভোর থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা। গত বৃহস্পতিবার পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় প্রতিনিধিদলটি কারখানা খোলার রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেয়।
এদিকে সরকার নতুন করে কোনও নির্দেশনা না দেওয়ায় সোমবার (১৯ জুলাই) বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের কাছে একটি এসএমএস পাঠান। তাতে তিনি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ১ আগস্ট থেকে কারখানা চালু করার প্রস্তুতি রাখার কথা জানান।
আপনার মতামত জানানঃ