যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরমাণু অস্ত্র নিয়ে একরকম হুমকিই দিলেন ইরানকে। তিনি বলেছেন, তিনি যতদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে থাকবেন, ততদিন ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ জুন) ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন বাইডেন।
এর পাশাপাশি সোমবার সিরিয়ায় বিমান হামলার সমর্থনেও যুক্তি দিয়েছেন বাইডেন। তিনি জানিয়েছেন, তার নির্দেশেই ওই বিমান হামলা হয়েছে। সোমবার সিরিয়া-ইরাক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের ওই বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসেছিলেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রেউভিন রিভলিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইরান প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয় তাদের। ইরান নিয়ে বরাবরই কড়া মনোভাব ইসরায়েলের। সেখানে একাধিক হামলা চালিয়েছে তারা।
এছাড়া ইরানের মদতপুষ্ট একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপরেও আক্রমণ চালিয়েছে তারা। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনায় উঠে আসে পরমাণু চুক্তির বিষয়টি। ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তারপর থেকেই একের পর এক হুমকি দিতে শুরু করে ইরান। দেশের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে ইউরেনিয়ামের মজুতও বহুগুণ বাড়িয়েছে দেশটি।
বাইডেন বলেছেন, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ফিরতে চায়। তার জন্য আলোচনাও চলছে। কিন্তু ইরান যা করছে, যুক্তরাষ্ট্র তা বরদাশত করবে না।
বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, ইরান ততদিন অন্তত পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। ওয়াশিংটন কড়া নজর রেখেছে। প্রয়োজনে কঠিনতম পদক্ষেপ নেবে তার দেশ।
বৈঠক শেষে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের জানান, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ইরান নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মনোভাব তিনি সমর্থন করেন।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই শেষ যুক্তরাষ্ট্র সফর রিভলিনের। আগামী মাসেই ইসরায়েলে নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেবে। এছাড়া ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাইডেন।
জাতিসংঘকে পরমাণু কেন্দ্রের তথ্য দেবে না ইরান
এদিকে জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ’কে পরমাণু কেন্দ্রগুলোর ভেতরের কোনো ছবি বা তথ্য দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে তেহরান। গত রবিবার(২৭ জুন) দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মাদ বাকের কলিবফ এ কথা বলেছেন।
রবিবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে মোহাম্মাদ বাকের কলিবফ বলেন, আইএইএ’র সঙ্গে তিন মাসের সাময়িক চুক্তি ছিল। কিন্তু সেটি আর নবায়ন করা হয়নি। ফলে এই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বসানো ক্যামেরার কোনো ছবি বা ভিডিও চিত্র বা অন্য কোনো তথ্য তাদের (আইএইএ) দেওয়া হবে না। এগুলো কেবল ইরানের কাছে থাকবে।
রয়টার্স বলছে, ইরানের এই ঘোষণার ফলে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি কার্যকর করার জন্য বিশ্বের ছয় পরাশক্তির (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও রাশিয়া) মধ্যকার চলমান আলোচনা আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে।
তেহরান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন যদি তেহরানের ওপর থেকে সকল নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় তাহলেই আইএইএ’র ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, সংস্থাটি কোনো তথ্য, ভিডিও বা ছবি পাবে না।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইএইএ’র সঙ্গে তিন মাসব্যাপী একটি চুক্তি করে ইরান। যার মধ্য দিয়ে পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বসানো ক্যামেরার মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রিতভাবে আইএইএ এসব স্থাপনার ওপর নজরদারি করার অনুমতি পায়। কিন্তু গত ২২ মে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এরপর আরও এক মাসের জন্য এই চুক্তির মেয়াদ বাড়তে একমত হয় উভয়পক্ষ। আর এখন জুনের শেষ সপ্তাহে এসে সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদও শেষ হওয়ায় জাতিসংঘের এই নজরদারি সংস্থাটিকে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানাল ইরান।
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে হয়। ইরান ইতোপূর্বে ইউনিয়াম ৬০ শতাংশ হারে সমৃদ্ধকরণের কথা জানিয়ে রেখেছে। আর সেটা করতে পারলে দেশটি সন্দেহাতীতভাবে ব্যাপক বিধ্বংসী এই অস্ত্রটি অর্জনের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। তবে তেহরান বরাবরই বলে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।
অবশ্য এই পরমাণু চুক্তি ফের কার্যকর করতে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তি দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
‘আটলান্টিকে ইরানি বহর দেখে আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল’
আটলান্টিক মহাসাগরে ইরানি নৌবাহিনীর উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ইসরায়েলকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল সাইয়্যেদ আব্দুর রহিম মুসাভি।
ইরানি বহর নৌ চলাচলের ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে জানিয়ে রোববার তিনি বলেন, আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থানরত যুদ্ধজাহাজ বহরের নৌযানগুলো ইরানের স্বনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। কারণ এগুলো ইরানের নিজের তৈরি।
ইরানের সেনাপ্রধান জেনারেল মুসাভি বলেন, ইরানি নৌবহরের নিজ ভূখণ্ড থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আটলান্টিক মহাসাগরের আন্তর্জাতিক পানি সীমায় এই অভিযান শত্রুদের জন্য অস্বস্তিকর। কারণ ইরানি যুদ্ধজাহাজ বহরের আটলান্টিক মহাসাগরে উপস্থিতির সুস্পষ্ট বার্তা রয়েছে। এ কারণেই এখন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।
ইরানের সেনাপ্রধান আরো বলেন, ইরানের সেনাবাহিনী আজ সব ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৪
আপনার মতামত জানানঃ