রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক রায়হান বাপ্পীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ৫ বছর আগে করা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) মামলায় ১৪ নভেম্বর ২০২০, শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে ১৩ নভেম্বর ২০২০, শুক্রবার সন্ধ্যায় চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মানিক রায়হান বাপ্পী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি যুগান্তরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এক শিক্ষকের দায়ের করা মামলায় কারাগারে গেলেন তিনি। তবে ওই শিক্ষকও কিছুদিন আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করার কারণে জেল খেটেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে ২০১৫ সালে ২৪ অক্টোবর যুগান্তরসহ ১৬টি পত্রিকার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমান। মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও মতিহার থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মোমিন।
আরো জানা যায়, মামলার এজহারে ১৬টি পত্রিকার কথা উল্লেখ ছিল। ফরেনসিকে গিয়ে কয়েকটি পত্রিকার তথ্য প্রমাণ মেলেনি। যেসব পত্রিকার তথ্য প্রমাণ মিলেছে সেখান থেকে ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। পরে আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হয়েছে।
মামলা দায়েরকারী শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গত ১৭ জুন ২০২০ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন তিনি। ৭১ দিন কারাভোগের পর ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন। মুক্তি পেয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক রাজনীতির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি, একই রকম দলাদলির কারণেই আইসিটি এই মামলা করেছিলেন তিনি। যার শিকার হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) কর্মরত সাংবাদিকরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছে। ১৫ নভেম্বার ২০২০, রবিবার সকালে জাবিসাসের দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক রুদ্র আজাদ সাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে সাংবাদিক সমিতির পক্ষে এক যৌথ বিবৃতি সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান আসাদ ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সংবাদ প্রকাশের জন্য তরুন প্রতিভাবান সাংবাদিক মানিক রায়হান বাপ্পীকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানো কারণে আমরা মর্মাহত। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার অর্ধশত বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাংবাদিককে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য কারাবরণ করতে হলো। যার মাধ্যমে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে। তার গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তারা আরো বলে, আশংকা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এভাবে হামলা-মামলার শিকার হলে ক্যাম্পাসগুলোতে সাংবাদিকতার পথ আরো সংকুচিত হয়ে যাবে। কাজের পরিবেশ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। তাই দ্রুত এই মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি একই সাথে মুক্ত সাংবাদিকতায় বাধা গ্রস্থ করা এই কালো আইন ও গ্রেফতার মানিক রায়হান বাপ্পীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। সেই সাথে মামলায় অভিযুক্ত সকল সাংবাদিকের অবিলম্বে অব্যহতির দাবি জানাচ্ছি।
আপনার মতামত জানানঃ