রেকর্ড সংখ্যক যুদ্ধবিমান নিয়ে আবারো তাইওয়ানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে চীন। মঙ্গলবার তাইওয়ানের আকাশে প্রায় ২৮টি চীনা যুদ্ধবিমান উড়ে যেতে দেখা গেছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দেশটির আকাশে সবচেয়ে বেশি চীনা যুদ্ধবিমান প্রবেশ করেছে। খবর বিবিসির।
এদিন চীনের যেসব যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের সীমান্তে প্রবেশ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে জে-১৬, জে-১১ ও এইচ-৬ বোমারু বিমান। এই যুদ্ধবিমানগুলো পারমাণবিক অস্ত্র, সাবমেরিনবিধ্বংসী ও ইলেকট্রনিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম।
তাইওয়ানের আকাশসীমায় এর আগে এতগুলো যুদ্ধবিমান কখনো প্রবেশ করেনি বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এর আগে গত বছরের ১২ এপ্রিল চীনের সর্বোচ্চ ২৫টি যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল ।
এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন একটি দেশের আঞ্চলিক ও জাতীয় আকাশসীমার বাইরের অঞ্চল। তবে সেখানে বিদেশি কোনো বিমান প্রবেশ করলে জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থে তা চিহ্নিত, পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি স্ব-ঘোষিত কার্যক্রম এবং প্রযুক্তিগতভাবে আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় অন্তর্ভূক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, গত বছর থেকে আকাশসীমায় চীনের অনুপ্রবেশের বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন দিয়ে আসছে স্বশাসিত তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এই প্রতিবেদন দেওয়ার শুরুর পর থেকে এটাই সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা। এই বিষয়ে চীন এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
তাইওয়ানে এমন সময়ে এই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটল, যখন শিল্পোন্নত শীর্ষ সাত দেশের জোট জি-৭ চীনের সমালোচনা করে চলতি সপ্তাহে সম্মেলন শেষে বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, তাইওয়ান প্রণালির শান্তি ও স্থিতিশীলতা উপেক্ষা করছে চীন। যদিও চীন জি-৭-এর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে।
গণতান্ত্রিক তাইওয়ান নিজেকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় দিলেও বেইজিংয়ের দাবি ওই দ্বীপটি তাদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ। চীন তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না। দীর্ঘদিন ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে চীন এবং তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সম্প্রতি হঠাৎ করে চীনবিরোধী কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। সম্প্রতি জি-৭ সম্মেলন থেকে যেমন চীনের সমালোচনা করা হয়েছে তেমনি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোও চীনের সমালোচনা করেছে।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে ন্যাটো নেতারা বলেছেন, চীন তাদের পরমাণু শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি করছে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে চীন তাদের সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন করছে।
এদিকে ন্যাটোর হুঁশিয়ারির পর পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। বেইজিংকে হুমকি দেয়ার মাধ্যমে ফাঁকা মাঠে অহেতুক উত্তেজনা না বাড়াতে চীন ন্যাটোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।
চীনের দাবি, তাদের প্রতিরক্ষা ও সামরিক আধুনিকায়নের বিষয়টি পুরোপুরি ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, চীনের প্রতিরক্ষানীতি স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত। ন্যাটো সম্মেলনে শীর্ষ নেতারা চীনের সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতাকে সতর্ক করেছেন। তারা বলেন, চীন নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সাথে দেশটির সামরিক ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, যাকে সারাবিশ্বের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।
সম্মেলনে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টেলটেনবার্গ বলেন, চীন বিশ্বশান্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হামলা চালিয়েছে চীন। আটক করা হয়েছে হংকংয়ের আন্দোলনকর্মীদের। অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর, কাজাখ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের।
চীনের বন্দী শিবিরে আটক রাখা হয়েছে সংখ্যালঘু মুসলিমদের। একই সঙ্গে চীন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ দেশের নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। চীনের এমন আচরণকে মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলছেন ন্যাটো প্রধান। কিন্তু চীন তাদের বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে চীনের এমন অনুপ্রবেশের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব-এশিয়াবিষয়ক শীর্ষ কূটনৈতিক ডেনিয়েল ক্রিটেনব্রিংক বলেছেন, তাইওয়ানের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সম্পর্কের উন্নয়ন করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ