জি-৭’র পর এবার চীন ও রাশিয়াকে ঠেকানোর মিশনে নামল ন্যাটো। আর এই মিশনে বরাবরের মতোই যোগ দিল যুক্তরাষ্ট্র। এই দুটি দেশের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কঠোর বার্তাও দিয়েছেন পশ্চিমা সামরিক জোটটির নেতারা। বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান উত্থান ঠেকাতে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জোট প্রধান জেনস স্টেলটেনবার্গ।
তিনি বলেন, চীনের বিরুদ্ধে ন্যাটোকে আরও শক্তিশালী নীতি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, চীন ও রাশিয়ার সৃষ্ট নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে ন্যাটোকে। খবর সিবিসি ও এএফপির।
চীন ঠেকানোর মিশনে ন্যাটো
সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত থেকে ইউরোপের দেশগুলোকে নিরাপত্তা দিতে ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ন্যাটোর যাত্রা শুরু হয়। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোর বাজেটে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা কমানোর পক্ষে ছিলেন। এটা নিয়ে ৩০ দেশের এই সামরিক জোটের সঙ্গে ওয়াশিংটনের ঐতিহাসিক মিত্রতায় দূরত্ব তৈরি হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন এই দূরত্ব কমানোর বার্তা নিয়ে ব্রাসেলসে গেছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ট্রাম্পের ওই নীতি থেকে সরে এসেছেন। ন্যাটোর এবারের সম্মেলনে সদস্যদেশগুলোর পারস্পরিক আস্থা ফেরানোর প্রক্রিয়া অন্যতম একক হবে। কেননা, বাইডেন ক্ষমতা নেওয়ার পর এটাই এই সামরিক জোটের প্রথম সম্মেলন। ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, এটাই ন্যাটোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হবে।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সম্মেলন শুরুর একদিন আগে জোট প্রধান জেনস স্টেলটেনবার্গ বলেন, বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান উত্থান ঠেকাতে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, চীনের বিরুদ্ধে ন্যাটোকে আরও শক্তিশালী নীতি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
কানাডার রাষ্টীয় গণমাধ্যম সিবিসি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টেলটেনবার্গ বলেন, চীনের সামরিক খাতের বাজেট বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দেশটির নৌবাহিনী বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী। চীন ধীরে ধীরে সামরিক খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, যা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টেলটেনবার্গ বলেন, চীন বিশ্বশান্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হামলা চালিয়েছে চীন। আটক করা হয়েছে হংকংয়ের আন্দোলনকর্মীদের। অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর, কাজাখ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের। বন্দী শিবিরে আটক রাখা হয়েছে সংখ্যালঘু মুসলিমদের। একই সঙ্গে চীন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ দেশের নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। চীনের এমন আচরণকে মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলছেন ন্যাটো প্রধান।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে চীন। দেশটি প্রতি বছর ১১ হাজার ২৫৬ মেগা টন কার্বন নিঃসরণ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় চীনকে এখনই কার্বন নিঃসরণের হার কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন, ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টেলটেনবার্গ। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগর ব্যবহারে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ন্যাটো মহাসচিব।
এদিকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে চীনে আটক কানাডার দুই নাগরিকের মুক্তি দাবি করেছেন জেনস স্টেলটেনবার্গ। তিনি বলেন মাইকেল কোভরিগ ও মাইকেল স্পাভরকে আটক রাখার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। চীনের এসব দমন নিপীড়ন নীতি ন্যাটোর সাথে সাংঘর্ষিক। ন্যাটো মহাসচিব দাবি করেন, চীনকে এসব নিপীড়ন এখনই বন্ধ করতে হবে।
ন্যাটোর আগে চীনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছিল জি-৭। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালে শেষ হওয়া সম্মেলনে চীনকে ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে জোটটি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প আরেকটি প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়নের উদ্যোগ। যার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে ধনী দেশগুলোর এই জোট।
এছাড়া চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে তিনি এ আহ্বান জানান। বলেন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা চালিত বিল্ড বেটার ওয়ার্ল্ড পরিকল্পনাটি চীনা প্রকল্পটির বিকল্প হতে পারে।
চীনকে ন্যাটোর হুঁশিয়ারি
চীনের সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতার বিষয়ে সতর্ক করেছেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর নেতারা।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে শুরু হওয়া ন্যাটো সম্মেলনে নেতারা বলেছেন, চীন তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়াচ্ছে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে চীন তাদের সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন করছে। খবর বিবিসির
ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সতর্কতা জারি করে বলেছেন, চীন সামরিক ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ন্যাটোর নিকটবর্তী হতে চলেছে।
তিনি বলেন, ন্যাটো জোট চীনের সঙ্গে নতুন কোনো স্নায়ুযুদ্ধ চায় না।
ক্ষমতায় আসার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ন্যাটো সম্মেলনে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়েছেন। ৭২ বছরের পুরোনো জোটে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সহায়তা বজায় রাখবে বলে আশ্বাস দেন বাইডেন।
বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের স্বার্থে ন্যাটো খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠার চুক্তি অনুসারে জোটের জন্য অনুচ্ছেদ ৫ মেনে চলা বাধ্যতামূলক। এই চুক্তি অনুসারে সদস্য দেশগুলো একে অন্যকে সুরক্ষিত রাখে।
আগামীকাল বুধবার জেনেভায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বাইডেন বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তার যোগ্য প্রতিপক্ষ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ