ইংল্যান্ডে চলমান এক শীর্ষ সম্মেলনে যখন জি-৭ গোষ্ঠীর নেতারা চীনের মোকাবিলা করতে একটি অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তখন লন্ডনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র তাদের সতর্ক করে বলেন, দুনিয়ার ওপর কয়েক দেশের খবরদারির দিন শেষ। সেই যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
“সেসব দিন, যখন অল্প কয়েকটি দেশের তৈরি করা ছোট একটি গোষ্ঠীর হুকুমে বৈশ্বিক সিদ্ধান্তগুলো ঠিক হতো, তা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা সবসময় বিশ্বাস করি, বিভিন্ন দেশ, তা বড় বা ছোট, শক্তিশালী বা দুর্বল, ধনী বা দরিদ্র যা-ই হোক না কেন, সব সমান। এ কারণেই বৈশ্বিক বিষয়গুলো সব দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া উচিত,” বলেছেন লন্ডনের চীন দূতাবাসের এক মুখপাত্র।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর বিশ্বের নেতৃস্থানীয় শক্তি হিসেবে চীনের আবির্ভাবকে সাম্প্রতিক সময়ের ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। গত চার দশকে অর্থনীতি ও সামরিক খাতে দেশটির অভাবনীয় উন্নতির পর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া খুঁজতে চলতি সপ্তাহেই দক্ষিণপশ্চিম ইংল্যান্ডে মিলিত হয়েছেন জি-৭ এ শীর্ষ নেতারা।
সূত্র মতে, জি-৭ গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা চীনের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলা করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের এক পরিকল্পনার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করেন যে চীনের পুনরুত্থান ঠেকাতে হলে পশ্চিমা শক্তিগুলোকে এখনই সক্রিয় হতে হবে। এ কারণে রোববার জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের এক সমাপনী ঘোষণা প্রকাশ করবেন। যে ঘোষণায় জলবায়ু পরিবর্তন সংকটে আক্রান্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরো বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা, এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে অবকাঠামো প্রকল্পসমূহে আরো অর্থায়নের কথা থাকবে। একে আবার বলা হচ্ছে চীনা কর্মসূচির বিকল্প।
চীনকে শত্রু হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র
বিবিসির রাজনৈতিক সংবাদদাতা রব ওয়াটসন জানাচ্ছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী বিশ্বকে গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হিসেবে চিত্রিত করতে চাইছেন। তবে সেখানে চীনকে অংশীদার, প্রতিদ্বন্দ্বী নাকি একটি নিরাপত্তা হুমকি- ঠিক কীভাবে দেখা হবে, তা নিয়ে জি-৭ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এখনো কোন ঐকমত্য নেই।
জি সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড নামে এমন এক পরিকল্পনার সূচনা করছেন। যা চীনের বেল্ট এ্যাণ্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির চাইতে উচ্চতর মানের হবে।
সূত্র মতে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বিনিয়োগ কর্মসূচিতে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন, যার আওতায় নানা রকম অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, চীনের এই কর্মসূচি দরিদ্রতর দেশগুলোর ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে যা তারা শোধ করতে পারছে না। এখন ক্ষমতাধর পশ্চিমা দেশগুলোর জোট জি-সেভেন এরই পাল্টা এক কর্মসূচি হাজির করতে চাইছে।
গত শনিবার এক বিবৃতিতে জি-৭ দেশগুলো বলেছে, তাদের অবকাঠামো পরিকল্পনা হবে ‘মূল্যবোধসম্পন্ন, উচ্চমানের এবং স্বচ্ছ’ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। যদিও কীভাবে এর অর্থায়ন হবে তা এখন অস্পষ্ট রয়ে গেছে।
এদিকে, বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো তৈরিতে ব্যাপক পরিমাণ বিনিয়োগের যে কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলছেন, তার ব্যাপারে গতকালই জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলছেন, জি-৭ এই তহবিল ছাড় করার মত অবস্থায় আসেনি।
কয়েকদিন আগে চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২৫ হাজার কোটি ডলার খরচ করবে এমন এক পরিকল্পনার কথা জানার পর চীন অভিযোগ করে যে যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহবাতিকগ্রস্ত বিভ্রমে ভুগছে। মার্কিন সেনেটে অনুমোদিত এই বিলটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং সেমিকণ্ডাকটরের মত ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য অর্থসংস্থান করবে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনকে হুমকি হিসেবে দেখা বন্ধ করা। চীন ইতোমধ্যেই নিজস্ব এমন কিছু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করেছে যা তাদের মতে দেশটিকে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সুবিধা করে দেবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৯৫০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ