ক্ষমতার হাত বদল হলো, তবে ভাগ্য বদল হলো না ফিলিস্তিনিদের। আবারও নির্যাতন আর নিপীড়নের খড়গ নেমে এসেছে তাদের উপর। সম্প্রতি ইসরায়েলিরা ধর্মীয় পার্ক তৈরির জন্য চালাচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান। আর এজন্য অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের সিলওয়ান অঞ্চলে প্রায় ১২০ ফিলিস্তিনি পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভ করলে চালানো হচ্ছে গুলি। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে ১০ জন। এছাড়া পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের। প্রসঙ্গত, অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিমতীরে মোট ১৬৪টি অবৈধ ইহুদি বসতি এবং ১১৬টি ইসরায়েল চেকপোস্ট আছে। এসব চেকপোস্টে প্রতিনিয়তই ফিলিস্তিনিদের নিপীড়ন করা হচ্ছে।
ধর্মীয় পার্কের জন্য বসতি হারাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা
ইসরায়েলে ধর্মীয় থিম পার্ক তৈরির লক্ষ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে হারাতে হচ্ছে তাদের বসতি। অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের সিলওয়ান অঞ্চলে প্রায় ১২০ ফিলিস্তিনি পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, গত সোমবার জেরুজালেমের মিউনিসিপ্যালিটি পরিদর্শক ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এ জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে ২১ দিন। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৩টি ভবন ও স্থাপনা সরিয়ে ফেলতে হবে।
এর আগে ইসরায়েলের এক আদালতের রায়ে বলা হয়, এসব ভবন অনুমতি ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে সমাজকর্মী অ্যাঞ্জেলা গডফ্রে-গোল্ডস্টেইন বলেন, যেসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে দেয়া হয়নি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, জেরুজালেম মিউনিসিপ্যালিটির পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের শহরের পূর্ব প্রান্তে বসতি স্থাপনের কোনো অনুমতি দেয়া হয় না, বরং ওই অঞ্চলে ইহুদি বসতি স্থাপনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ইহুদি বসতি স্থাপনের জন্য ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের জোর করে বহিষ্কার করছে তারা।
জেরুজালেমের ডেপুটি মেয়র আরিয়া কিং ও ফ্লেয়ুর হাসান-নাহুম সম্প্রতি বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি অবকাঠামো নির্মাণ সীমিত করা। তিন প্রজন্ম ধরে ওই এলাকায় বাস করছেন সিলওয়ানের ভূমি রক্ষা কমিটির মুখপাত্র ফাখরি আবু দিয়াব। তাদের পরিবারে ৩০ জন সদস্য রয়েছেন। তার বাড়ি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে আবু দিয়াব বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে, বিশেষ করে পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি বসতি হওয়ার আগে থেকে আমার পরিবার এখানে বসবাস করছে। ১৯৮৮ সালে আমি যখন বিয়ে করি, তখন তিন বছর চেষ্টা করে ভবন বড় করার অনুমতি চেয়েছিলাম। আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ অনেকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাকে বারবার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সেখান ইহুদি থিম পার্ক করা হবে।’
বিক্ষোভে গুলি— নিহত ১, আহত ৯
অধিকৃত পশ্চিমতীরে শুক্রবার অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সেনা সদস্যদের নৃশংস ওই হামলায় ১০ ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সি মো. সাঈদ হামাইল নামে এক কিশোর নিহত এবং আরও ৯ জন গুলিবিদ্ধ হন। খবর আরাদোলুর। আহতদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, ইহুদি দখলদারদের আগ্রাসন ও অবৈধ বসতি নির্মাণের বিরুদ্ধে শুক্রবার পশ্চিমতীরের নাবলুস, কালকিলিয়া ও রামাল্লাহ শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ফিলিস্তিনিরা। এসময় তাদের ওপর বিনা উসকানিকে গুলিবর্ষণ, টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ফিলিস্তিনি নারীকে হত্যা
অধিকৃত জেরুজালেম আল-কুদস শহরে ইসরায়েলি বর্বর সেনাদের গুলিতে এক ফিলিস্তিন নারী নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনারা গতকাল শনিবার জেরুজালেম আল-কুদস শহরের উত্তর অংশে কালান্দিয়া এলাকার প্রবেশ পথে ২৮ বছর বয়সি এই ফিলিস্তিন নারী ইবতিসাম কাআবানেকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায়। খবর ইরনা ও আলজাজিরার।
গুলিতে ইবতিসাম মারাত্মক আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তার শরীর থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে মেডিকেল টিমগুলোকে অনুমতি দেয়নি ইসরায়েলি সেনারা। ফলে অসংখ্য মানুষের চোখের সামনে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিবর্ষণের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ওই ফিলিস্তিন নারী মারা যান।
দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাকে হত্যা
পশ্চিমতীরে জেনিন শহরে বৃহস্পতিবার ভোরে এক অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি করে তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। এদের মধ্যে দুজনই ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের গোয়েন্দা কর্মকর্তা। খবর আনাদোলুর।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহত দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তা হলেন— আধাম ইয়াসের (২৩) ও তাইসীর ইসা (৩২)। নিহত আরেকজন হলেন, জামিল আল আমুরি। আগে তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ছিলেন। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর ওই অভিযানে মাহমুদ আল বাজর (২৩) নামে আরেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা গুরুতর আহত হযেছেন। তাকে ইসরায়েলের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের ওই দুই কর্মকর্তা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে এ সময় একটি গাড়ির নিচে আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। যদিও ইসরায়েলের গণমাধ্যমের দাবি, নিহত আল আমুরি ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদের সদস্য। যদিও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এখনও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ