ভারতের কৃষক আন্দোলন সাম্প্রতিককালে আন্দোলনগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, দীর্ঘদিনব্যপী এবং আন্তর্জাতিক মহলে বহুল চর্চিত একটি আন্দোলন। সাত মাস ধরে দেশটির রাজধানীর বুকে চলে আসছে এই আন্দোলন। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের এই বিক্ষোভ আরও তীব্রতর করতে এবার দেশজুড়ে রাজভবন ঘেরাও করার কর্মসূচি নিল কৃষিজীবীরা।
শুক্রবার (১১ জুন) ৪০টি কৃষক সংগঠনের যৌথমঞ্চ ‘সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা’ জানিয়েছে, ২৬ জুন দেশজুড়ে রাজভবন ঘেরাও করবে তারা।
ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম মারফতে জানা যায়, বিক্ষোভ চলাকালীন রাজ্যপালদের কালো পতাকা দেখিয়ে কেন্দ্রের বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাবেন চাষিরা। তারপর রাজ্যপালের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হবে।
এই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কৃষকনেতা ইন্দ্রজিৎ সিং জানান, ২৬ জুন ‘খেতি বাঁচাও, লোকতন্ত্র বাঁচাও দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা রাজভবনের সামনে কালো পতাকা দেখিয়ে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাব। তারপর প্রতি রাজ্যের রাজ্যপালদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পাঠাব। ২৬ জুন কৃষক আন্দোলনের ৭ মাস পূর্ণ হবে। ১৯৭৫ সালে ওই দিনই দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে দু’দিন আগেই দেখা করেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত। এই আন্দোলনকে প্রথম থেকেই সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল। সংসদীয় দলও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেছিল। কৃষক বিরোধী কৃষি আইন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টিকায়েতের কথা হয়েছে। পরে টিকায়েত মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘মমতা বিজেপির হাত থেকে বাংলাকে বাঁচিয়েছেন, এবার দেশকে বাঁচাতে হবে।’
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকদের দাবিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলনের পাশে থাকব। মোদি সরকারকে হটানোই এখন লক্ষ্য। এজন্য বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলব। জোট বেঁধে কি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’
দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন কৃষকরা। একাধিকবার কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষক নেতারা বৈঠক করলেও সমাধান মেলেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্দোলনের শুরুর দিকে কয়েক দফা আলোচনা করলেও বর্তমানে একে পাত্তাই দিচ্ছে না ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিছুটা বদল করা হলেও কৃষি আইন যে প্রত্যাহার করা হবে না তা সাফ জানিয়ে দিয়েছে মোদি-শাহের সরকার। আর চাষিরাও নিজেদের দাবিতে অনড়।
এর আগে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানী দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনে টিয়ার গ্যাস এবং লাঠি-চার্জ করে পুলিশ।
সে সময় ট্রাক্টর নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন কৃষকরা। ওই কর্মসূচির আগে দিল্লির সিংঘু সীমানায় পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভরত কৃষকদের বিরুদ্ধে।
করোনাকালে ভারত বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে চলে গেলে দিল্লিতে একটানা বিক্ষোভে রাশ টেনেছিলেন কৃষকরা। কৃষকদের একাধিক সংগঠনের তরফে আপাতত বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দেশজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। দিল্লির সীমানা ঘেরাও করে রাখা কৃষকদের অনেকেই করোনায় সংক্রমিত হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি করোনা আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন কৃষকের মৃত্যুও হয়েছিল। পরিস্থিতির বিচার করেই সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা-সহ কৃষকদের সংগঠনগুলি আপাতত আন্দোলন স্থগিত রেখে কৃষকদের নিজ-নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তবে দাবি থেকে একচুলও সরে আসতে রাজি নন কৃষকরা। কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে অনড় কৃষক-সমাজের একটি বড় অংশ। সেই লক্ষ্যেই এবার নয়া কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার তরফে।
ভারতে ফের দৈনিক মৃত্যু ছাড়াল ৪ হাজার
কয়েকদিন মোটামুটি কমতির দিকে থাকলেও করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতে ফের বাড়ছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা। কয়েকদিন আগে দৈনিক মৃত্যু প্রায় দুই হাজারের কোঠায় নেমে এলেও শনিবার ফের তা ছাড়িয়েছে চার হাজারের গণ্ডি। তবে আগের দিনের তুলনায় কমেছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। একইসঙ্গে কমেছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও।
শনিবার (১২ জুন) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৮৪ হাজার ৩৩২ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন সংক্রমিত রোগী কমেছে ৭ হাজারের বেশি। সর্বশেষ এই সংখ্যাসহ মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৫৫ জনে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ হাজার ২ জন। আগের দিনের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৬০০। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮১ জন।
দৈনিক আক্রান্তের থেকে বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে উঠাতেই ভারতে প্রতিদিনই কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। একসময় দেশটিতে ৩৭ লাখের বেশি সক্রিয় রোগী থাকলেও কমতে কমতে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ১০ লাখের ঘরে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে সক্রিয় রোগী কমেছে প্রায় ৪১ হাজার। দেশটিতে এখন মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৮০ হাজার ৬৯০ জন।
দৈনিক মৃত্যু হঠাৎ করে বাড়লেও ভারতে সংক্রমণের হার মোটামুটি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। গত ৫ দিন ধরেই দেশটির সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। দেশে নতুন আক্রান্তের থেকে সুস্থ বেশি হওয়ায় কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। প্রায় মাসখানেক ধরেই তা ধারাবাহিক ভাবে কমছে।
এছাড়া গত মে মাসের তুলনায় জুন মাসের শুরু থেকেই গতি পেয়েছে ভারতের করোনা টিকাদান কর্মসূচিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে টিকা পেয়েছেন ৩৪ লাখ ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। এ নিয়ে দেশে মোট টিকা দেওয়া হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি মানুষকে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ