ইরানের মানবাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিক নারগেস মোহাম্মাদীকে কঠোর শাস্তি দিয়েছে ইরান সরকার। তাকে দুইটি জরিমানাসহ ৮০টি বেত্রাঘাতের পাশাপাশি ৩০ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন তৈরি করে দেশে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে সরব থাকায় তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়।
এর আগেও একই অপরাধে তিনি জেল খেটেছেন। তার ১০ বছরের জেল হেফাজতের শাস্তি হয়েছিল। তবে আট বছরের মাথায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। অক্টোবরে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এবার তাকে এই শাস্তি দেওয়া হলো।
বিবিসি জানিয়েছে, ৪৯ বছর বয়সী নারগেস মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে প্রচারণা চালিয়েছেন। একই সঙ্গে ইরানে মানবাধিকার সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করতেন। ২০১৫ সালের মে মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইরান সরকারের দাবি, দেশের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বে তিনি প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন, দেশ বিরোধী কাজ করছেন।
৪৯ বছরের নারগেস শুধু মানবাধিকারকর্মী নন। তিনি ইঞ্জিনিয়ার, পদার্থবিজ্ঞানের গবেষক। তার দুই সন্তান আছে। নোবেল পুরষ্কারপ্রাপক শিরিন এবাদির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শিরিনও মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন। এখন তিনি জেলে। নারগেসও ২০২০ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। দেশের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বে তিনি প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন, দেশ বিরোধী কাজ করছেন, এমন সব অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
নারগেস এ বিষয়ে ডয়েচে ভেলেকে কিছু না জানালেও, তার আইনজীবী খবরটির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
২০২০ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে নারগেস ডিডাব্লিউকে বলেছিলেন, তাকে গ্রেপ্তার করে এবং শাস্তি দিয়ে দেশের মানুষের কাছে একটি বার্তা পৌঁছাতে চাইছে ইরানের প্রশাসন। প্রতিবাদ করলেই জেলে যেতে হবে।
ইরানের মানবাধিকারকর্মী নারগেস মোহাম্মদীর এই শাস্তি নিয়ে সরব হয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠন।
নারগেসের শাস্তি ঘোষণা হওয়ার পরেই তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার। অবিলম্বে নারগেসের উপর থেকে সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই দাবি করেছে। ইরান সরকারের কাছে তাদের দাবি, নারগেসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি পুনর্বিবেচনা করা হোক।
আধুনিক যুগেও ইরানে নারী ও কন্যাশিশুরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত। পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ আর নারীবিদ্বেষী আচরণে জর্জরিত ইরানের নারীদের নিত্যদিনের জীবন। বৈষম্যমূলক আইনের কারণে দিনদিন পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বেড়ে চলছে দেশটিতে।
জানা যায়, হয়রানি, গ্রেপ্তার, কারাদণ্ডের ভয় নিয়ে কাজ করতে হয় নারী অধিকার কর্মীদের; বিশেষ করে যারা বাধ্যতামূলক পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান।
মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, ইরান সরকারের আক্রমণ থেকে বাদ পড়ছে না নারী, শিশু, মানবাধিকার কর্মী, সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠী, লেখক, সাংবাদিক ও দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে- এমন ব্যক্তিরা। নির্যাতন, নিপীড়ন, হয়রানি, বিচারবহির্ভূত আটক, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা, মৃত্যুদণ্ডসহ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার এই বিপুলসংখ্যক মানুষ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ