মামুন আব্দুল্লাহ : চীন সাম্প্রতিক বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার মতান্তরে ৯৮৭.২৩ মিলিয়ন ডলার ঋণ তিস্তা রিভার প্রজেক্ট ডেভেলপের জন্য দিতে যাচ্ছে। তিস্তা নদী বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের দ্বিতীয় বিষফোঁড়া, প্রথমটি পদ্মা ব্যারেজ। বাংলাদেশের সঙ্গে যখন পদ্মাকে নিয়ে সমস্যা বাড়ছিল তখন তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। চীন দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে, বিশেষত বাংলাদেশে। এর সর্বশেষতম সংযোজন তিস্তা রিভার প্রোজেক্ট ডেভেলপমেন্ট যখন ভারত-চীন, আমেরিকা-চীন, আমেরিকা-বাংলাদেশ, ভারত-বাংলাদেশ, চীন-পাকিস্তান, পাকিস্তান-সৌদি আরবের সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে।
তিস্তা ৪১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি নদী। তিস্তার দুইটি ফ্লো রয়েছে। একটি সিকিম ও অপরটি পশ্চিম বঙ্গের উপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে এটি পদ্মায় পতিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। ভারতের বেশিরভাগ নদীই মূলত পদ্মা ও মেঘনার সঙ্গে মিশেছে। এছাড়া তিস্তা ভারত ও বাংলাদেশের পদ্মা (গঙ্গা) ও ব্রহ্মপুত্রের রিভার সিস্টেমের পর সবচেয়ে বড় ট্রান্সবাউন্ডারি রিভার। ভারতের তিনটি মেজর রিভার সিস্টেম রয়েছে। ইন্ডোস রিভার সিস্টেম, গঙ্গা রিভার সিস্টেম, ব্রহ্মপুত্র রিভার সিস্টেম। বলা হয়ে থাকে, ভারতের অন্ততপক্ষে ৫০টি নদী বাংলাদেশের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে, এদের মাঝে তিস্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর একটি। তিস্তার মোট ক্যাচমেন্ট হল ১.৭৫ মিলিয়ন স্কয়ার কিলোমিটার।
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সম্পর্কিত সমস্য বেশ পুরাতন। টু নেশন ওয়ান রিভার পোস্টারে দেখা যাচ্ছে তিস্তার অদ্যপান্ত। ১৫১ কিলোমিটার সিকিমের উপর দিয়ে বয়ে গেছে, ১৪২ কিলোমিটার পশ্চিম বঙ্গের উপর দিয়ে এবং বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ১২১ কিলোমিটার।
কিন্তু তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের এই বিবাদের কারণ কী? মূল কারণ হল তিস্তা ভারত ও বাংলাদেশ দুটো দেশের জন্যই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ান ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৪% কৃষি জমি ও ৭৩% পপুলেশন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তিস্তা নদীর উপরে নির্ভরশীল। ভারতের উত্তর বঙ্গের সবগুলো হ্রদের জন্য তিস্তার পানি ভীষণ প্রয়োজনীয়। পশ্চিম ও উত্তর বঙ্গের সমস্ত কৃষকই তিস্তার উপরে নির্ভরশীল। একারণে ভারত সরকার তিস্তার উপরে একটি ব্যারেজ তুলে দিয়ে পুরো অঞ্চলে পানি সরবরাহ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ ও ভারতের পানি বন্টের জন্য একটি জয়েন্ট রিভার কমিশন গঠন করে। সেখানে উল্লেখ করা হয় ভারতকে ৪২.৫% পানি, বাংলাদেশের জন্য ৩৭.৫% পানি পাওয়া উচিৎ এবং বাদবাকী ২০% পানি অব্যবহৃত রাখা হবে। ১৯৮৩ সালে ভারত বাংলাদেশের এডহক শেয়ারিং এগ্রিমেন্ট সাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভারত ৩৯% পানির হিস্যা পায়, বাংলাদেশ পায় ৩৬% এবং বাদবাকী ২৫% পানি অব্যবহৃত রেখে দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালের কমিশন অনুযায়ী ভারত ও বাংলাদেশের পানির হিস্যা বাড়ানো হয়েছিল নব গঠিত রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য, এবং ১৯৮৪ সালে যৌথ নদী বন্টন চুক্তিতে সেটা আবারও উল্লেখ করে বলা হয় ভারতকে ৪২.৫% পানি, বাংলাদেশের জন্য ৩৭.৫% পানি পাওয়া উচিৎ এবং বাদবাকী ২০% পানি অব্যবহৃত রাখা হবে। প্রস্তাব রাখা হলেও এই চুক্তি কখনোই স্বাক্ষরিত হয়নি। মূল বিবাদ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে যখন বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেয় তিস্তা ব্যারাজ বানানোর। বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তে ভারতে প্রচুর সমালোচনা শুরু হয়ে যায় এবং অফিশিয়ালি প্রতিবাদ ভারত সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়। এরপর ২০১১ সালে তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বন্দ্ব পরিপূর্ণতা পায়। মনমোহন সিং সরকারের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল যেখানে ১৫ বছরের জন্য পানি বন্টন চুক্তি সাক্ষরিত হবে যেখানে ১৯৮৪ ও ১৯৭২ সালের শতাংশ অনুযায়ী পানি বন্টনের উল্লেখ করা হয়৷ ২০১১ সালে মনমোহন সিং চুক্তি সম্পাদনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন, কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে এসে বাতিল করা হয় যখন মমতা ব্যানার্জি এই চুক্তির প্রতি সম্পূর্ণ বিরোধিতা প্রকাশ করেন। তখন থেকে এই বিবাদ এখনও বিদ্যমান। বাংলাদেশের দাবী ছিল ৫০-৫০ পানি বণ্টন। কিন্তু এই চুক্তি নিয়ে এতটা জল ঘোলা হয়ে গেছে যে এটা এখন দুই দেশেরই রাজনৈতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে। ২০১৪ তে যখন BIMSTEC এর সম্মেলন চলছিল তখন ভারতে নির্বাচনের মৌসুমও চলছিল। মমতা তখন পশ্চিম বঙ্গে তার নির্বাচনী প্রচারণায় বলেন, আপনারা কংগ্রেস সরকারকে (মনমোহন সরকারকে) একটি শিক্ষা দিন, কেননা তারা ভারতের জন্য তিস্তার পানি কম বরাদ্দ করেছে। এর প্রভাব নির্বাচনে পড়ে। পশ্চিম বঙ্গে UPA খুবই নিদারুণভাবে পরাজিত হয়। ঠিক তখন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী তিস্তার ৫০-৫০ পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে ক্যাম্পেইন করছিলেন।
ভারত বাংলাদেশের তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির দুইটি দিক রয়েছে৷ প্রথমত এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। কারণ ভারত ও বাংলাদেশ পারস্পরিক সম্পর্ক এর সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয়ত এর কারণে এশিয়ার রাজনীতিতে কিছুটা প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশ যেহেতু সংঘবাদী রাষ্ট্র না, সেহেতু এর প্রভাব শুধু রাজনীতির উপরেই থাকে কিন্তু ভারত সংঘবাদী রাষ্ট্র হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের মতের অমিল সৃষ্টি হয়। এবং বাংলাদেশকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার দুইটি সরকারের সাথে আলাদা আলাদা কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হয়। একই সঙ্গে একথা ভারতের ক্ষেত্রেও খাটে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে গিয়ে তারা রাজ্য সরকারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার কখনোই এমন কিছু করবে না যাতে তাদের আভ্যন্তরীণ কোন্দল বৃদ্ধি পায়। তিস্তাকে নিয়ে ভারতের বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তা নির্ভর করে পশ্চিম বঙ্গের রাজ্য সরকার ও দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে। ফলে গত ৬ বছরে এই ইস্যুর কোনো উন্নতিই ঘটেনি।
এরই মাঝে চীন যখন বাংলাদেশকে তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের জন্য এক বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রস্তাব করেছে তখনই তারা তিস্তা নাটকের মাঝখানে প্রবেশ করে। এটা ঠিক তখনই ঘটছে যখন গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনা মুখোমুখি অবস্থান করছে। এছাড়া চীনের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে স্ট্রিংস অব পালস প্রোজেক্টের মাধ্যমে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মিয়ানমার রাষ্ট্রগুলোতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে, এই প্রজেক্টে শুধু ভারতই নেই। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে এই অর্থ পেতে যাচ্ছে। আর এই চুক্তি বাতিলের জন্যই ভারতের কূটনীতিকদের এত রদবদল, এই দুর্যোগঘন পরিবেশে বাংলাদেশে আগমণ। চীন ও ভারত দুটো দেশই জানে এই অর্থের ফলে চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের যেমন আরও উন্নতি যেমন ঘটবে তেমন ইন্দো-চীন, ইন্দো-বাংলা সম্পর্কেও একটি বিশাল প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। চীন ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ২১.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে BRI (Belt and road initiative) প্রজেক্টে। এছাড়াও চীনের FDI বাংলাদেশে ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করে রেখেছে চীন বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরে আনুমানিক ৪০৭ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সম্পাদিত করেছে ২৬০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে।
বিপুল অর্থ ঋণ বিনিয়োগকে ভারত তাদের জন্য একটি ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দ্য হিন্দুর একটি আর্টিকেলের শিরোনাম ছিল, China Teesta plants: Foreign Secretary likely to visit Bangladesh today. অপরদিকে মোদি ও শেখ হাসিনা সরকারের রেখা সব সময়ই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ২০১৪ থেকে ভারত বাংলাদেশের প্রচুর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। বাংলাদেশ ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে উপড়ে ফেলেছে যেটা ভারত সরকারের জন্য বিশাল একটি পাওয়া। এছাড়া নাম মাত্র ট্যাক্সে রোড ট্রানজিটের অনুমতি বাংলাদেশ ভারতকে দিয়েছে। এগুলো ভারতের জন্য ইতিবাচক হলেও বাংলাদেশের জন্য কতটুকু ইতিবাচক তা নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে। অপরদিকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে এই বিবাদ ভারতকে কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি করলেও করতে পারে।
ভারতের প্রশ্ন হল, বাংলাদেশ চীনের এই ঋণ কেন গ্রহণ করছে। The Diplomat নিউজ পোর্টাল এ ব্যাপারে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছে। How Bangladesh is benefiting from the China-India rivalry আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের সতর্ক হওয়া উচিৎ কেননা চীন বিশেষ করে ইউয়ান ডিপ্লোমেসি ভারতের সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রে প্রচুর অর্থ সহায়তা প্রদান করে, অবকাঠামোর উন্নয়ন করে, BRI এ বিনিয়োগ করে। কিন্তু বাংলাদেশের এতে কী লাভ? তাদের মতে বাংলাদেশ একদিক থেকে চীনের অর্থ দিয়ে অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাচ্ছে অপরদিকে ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক ইতিবাচক রেখেছে তাতে করে বাংলাদেশ দুই দেশের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছে। ভারত বাংলাদেশ ও চীনের তিন দেশেরই বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের ব্যালেন্সিং স্ট্র্যাটেজি পুরোপুরি প্রশংসার যোগ্য। বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে কার সঙ্গে চুক্তি করবে কার সঙ্গে করবে না। এমন না, বাংলাদেশ ভারতের একটি অঙ্গ রাজ্য তাই ভারতের সুবিধার জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তি করা যাবে না। বহু বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশকে যেকোনো একটি দেশের পক্ষ নেওয়া উচিৎ। চীন অর্থ বিনিয়োগ করে ভারতের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে নিজের পক্ষে নিয়ে নেবে ঠিকই কিন্তু ক্লোজ প্রক্সিমেটলি চীনের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব না। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া লক কান্ট্রি। চারিদিকে ভারতের সীমানা যেহেতু ঘিরে রেখেছে তাই বাংলাদেশ চীনের থেকে ভারতের উপরে বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলও বাংলাদেশের দ্বারা লকড এটা বিবেচনা করতে অনেকে ভুলে যান। দুটো দেশের টিকে থাকাটা নির্ভর করে দুই দেশের উপরেই।
কিন্তু চীনের এই ঋণ কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ সহ বহু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে এই বলে যে বাংলাদেশ খুব সম্ভবত চীনের ঋণের ফাঁদের ব্যাপারে। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বিমানবন্দরের কথা ভুলে গেলে চলবে না, যেখানে চীন শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয় বিমানবন্দর নির্মাণ কাজের জন্য। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে শ্রীলঙ্কা ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে বিমানবন্দরের মালিকানা নিয়ে নেয় চীন। ফলে ২৪ বিলিয়ন ডলারের এই যে বিশাল ঋণ চুক্তির মাধ্যমে কর্ণফুলী টানেল সহ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে যে বিনিয়োগ চীন করেছে তা পরিশোধ করতে না পরিণতি কি হতে পারে এটা ভাবার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
তথ্যসূত্রঃ
https://thediplomat.com/2020/07/bangladesh-and-the-china-india-conflict/
https://thediplomat.com/2019/07/how-bangladesh-is-benefiting-from-the-china-india-rivalry/
মতামত ও বিশ্লেষন বিভাগে প্রকাশিত সকল মতামত লেখকের নিজস্ব এবং এটি State Watch এর সম্পাদকীয় নীতির আদর্শগত অবস্থান ধরে নেওয়া ঠিক হবে না।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ