জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় গত ৯ দিনে প্রায় ৪৫০টি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে কমপক্ষে ৫২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জেনেভাতে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয় সংস্থা (ওসিএইচএ) এর মুখপাত্র জেনস লেয়ার্ক সাংবাদিকদের বলেছেন, বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ গাজায় জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত ৫৮টি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন
ইয়েন্স লেয়ার্কে বলেন, ইসরায়েলের বিমান হামলায় ১৩২টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া ৩১৬টি ভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হাসপাতাল ও নয়টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র রয়েছে। এই হামলার কারণে সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন প্রায় আড়াই লাখ গাজাবাসী।
ইসরায়েলের বিমান হামলা নিয়ে গতকাল একটি বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনের আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে, তা যুদ্ধাপরাধের সমান। যদিও ইসরায়েল তা অস্বীকার করেছে। দেশটির সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যাতে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত হওয়ার ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া যায়।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এবারের সংঘাতে এ পর্যন্ত ২১৫ জন ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে শিশু কমপক্ষে ৬১টি আর নারী ৩৬ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের পক্ষে প্রাণহানি ১২ জনের। এর মধ্যে শিশু দুটি। গত নয় দিনে সবচেয়ে প্রাণহানি হয়েছে রোববার। ওই দিন অন্তত ৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এবারের এই সংঘাতকে বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত।
এদিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার রকেট ছুড়েছে। এ হামলার জবাবে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১৩০ জন হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য নিহত হয়েছেন ৩০ জন।
সংকট ঘনীভূত হতে থাকার মধ্যে দ্রুত সংঘাত বন্ধে প্রস্তাব পাসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ দিচ্ছে ফ্রান্স। এক বিবৃতিতে দেশটি জানায়, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি ও জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাখোঁ। কনফারেন্সে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ফ্রান্সের খসড়া প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন নেতারা।
এর আগে গাজা উপত্যকায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরে নিরাপত্তা পরিষদের যৌথ বিবৃতি আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ গাজায় সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকারেও’ সমর্থন দিয়েছে দেশগুলো। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে মিসর।
ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রহীন ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যা ৫৯ লাখের বেশি। অবরোধে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ২০ লাখ বাসিন্দার গাজা উপত্যকা নতুন করে সহিংসতার মুখে পড়েছে। গত কয়েক দিনে অঞ্চলটিতে বোমা মেরে ৪০টি স্কুল ও চারটি হাসপাতাল ভবন আংশিক বা পুরোপুরি ধসিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বিমান। জ্বালানি সংকটে অঞ্চলটির মৌলিক সেবাও বন্ধের পথে।
ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছিল উত্তেজনা। এর জেরেই শুরু হয় সহিংসতা। আল-আকসা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে ইসরায়েলে রকেট ছোড়ে হামাস। পাল্টা জবাবে ১০ মে থেকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামলা চলছে গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলে।
যতক্ষণ প্রয়োজন, পূর্ণ শক্তিতে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩২৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ