ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় একটি ‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষাব্যবস্থা’ করার প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্ক। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় শিশুসহ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির মধ্যে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জরুরি বৈঠকে এই প্রস্তাব তুলেছে দেশটি। তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম টিআরটিওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত রোববার ৫৭ দেশের জোট ওআইসির ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলু এই প্রস্তাব করেন।
ওআইসি’র জরুরি বৈঠকে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের মতো সদস্য দেশগুলো পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আর বলেছেন ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু প্রতিনিধিদের বলেন, ‘আগ্রহী দেশগুলোর সামরিক এবং আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন করে ফিলিস্তিনিদের শারিরীক সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।’ তিনি ওআইসি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ন্যায়বিচার ও মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘অন্য কোনও বিবেচনা থাকা উচিত নয়। এখন আমাদের একতা এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের কার্যকারিতা প্রদর্শনের সময়।’ তিনি বলেন মুসলিম বিশ্ব প্রত্যাশা করছে ওআইসি নেতৃত্ব এবং সাহস প্রদর্শন করবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে তুরস্ক।’
এই ধরনের আন্তর্জাতিক কোনও বাহিনী গঠনের বিস্তারিত নিয়ে ওআইসি’র সভায় কোনও আলোচনা হয়নি। তবে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসিকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ২০১৮ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবের আওতাতেই আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত ভাবেই এই ধরনের বাহিনী গঠন সম্ভব।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগে একই ধরনের প্রস্তাব সামনে আনেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এই প্রস্তাব দেন তিনি।
এরদোগান বলেন, জেরুজালেমের মতো মুসলিমদের পবিত্র নগরীর দায়িত্ব ইসরাইলের মতো সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের হাতে থাকতে পারে না। ইহুদিবাদীদের হাত থেকে জেরুজালেমের কর্তৃত্ব আমরা ফিলিস্তিনিদের হাতে দিতে চাই। এ ব্যাপারে আমরা কূটনীতিক ও সামরিক উভয়ভাবেই ফিলিস্তিনকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, মুসলিমদের পবিত্রতম মসজিদে হামলাকারী এবং নিরপরাধ নারী-শিশুসহ ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের ওপর বোমা হামলাকারী ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল এ প্রাচীন নগরীর কর্তৃত্ব করতে পারে না।
এদিকে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে বাইডেন তার হাত রক্তাক্ত করেছেন বলে বাইডেনের উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, ‘আপনি আপনার রক্তাক্ত হাত দিয়ে ইতিহাস লিখছেন।’
বাইডেনের উদ্দেশে এরদোয়ান আরও বলেন, এ কথা বলতে আপনি আমাদের বাধ্য করেছেন। কারণ, আমরা এ নিয়ে আর চুপ থাকতে পারি না। আজ আমরা দেখলাম, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে সই করেছেন বাইডেন।’
তুরস্কের টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে বাইডেন সম্পর্কে সরাসরি এই মন্তব্য করেন এরদোয়ান। গত জানুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন বাইডেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর বাইডেনকে সবচেয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন এরদোয়ান।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ চালানোর অভিযোগ আনেন এরদোয়ান।
গত রোববার ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আহ্বানসংবলিত বিবৃতি আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে নিরাপত্তা পরিষদের রোববারের বৈঠক থেকে কোনো ফল আসেনি। তার আগে বাইডেন ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেন। অবশ্য এখন তিনি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৫২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ