ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে গত আট দিনের রক্তক্ষয়ী সহিংসতার পর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জো বাইডেন সোমবার যুদ্ধবিরতির এ আহ্বান জানান। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় সেখানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬১ শিশুসহ ২১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চান বাইডেন
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অব্যাহত চাপের মুখে গাজায় সহিংসতা বন্ধে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সোমবার (১৮ মে) এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতিতে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বাইডেন-নেতানিয়াহুর মধ্যকার ফোনালাপ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতির পক্ষে তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বন্ধে মিসরসহ অন্যান্য অংশীদার দেশের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুদ্ধবিরতির পক্ষে বাইডেন এখন তার সমর্থন ব্যক্ত করলেও রোববার ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আহ্বান সংবলিত বিবৃতি আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে নিরাপত্তা পরিষদের রোববারের বৈঠক থেকে কোনো ফল আসেনি।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের চলমান সংঘাতের সূত্রপাত মূলত গত ১৩ এপ্রিল। পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রাতে জেরুজালেমে দামেস্ক গেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় সেদিন পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায় কয়েকটি ফিলিস্তিন পরিবারকে উৎখাতের মাধ্যমে।
২ মে শেখ জারাহ এলাকায় ইসরায়েলি পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ জারাহ এলাকায় ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উৎখাতের বিষয়ে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট ৯ মে শুনানি পিছিয়ে দেন। তবে এতে উত্তেজনা থামেনি। ১০ মে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এরপর হামাস রকেট হামলা চালালে ঈদুল ফিতরের দিন থেকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এই সংঘাত এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
এবারের এই সহিংসতাকে বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের সংঘাতের পর সবচেয়ে বড় সংঘাত। ২০১৪ সালের ওই সংঘাতে ২ হাজার ২৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হন। ইসরায়েলের পক্ষে প্রাণহানি ছিল ৭৪, যাদের অধিকাংশই সেনাসদস্য।
ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২১২
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১২ জনে দাঁড়িয়েছে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৫০০ জন ফিলিস্তিনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ৬১টি শিশু ও ৩৬ জন নারী রয়েছেন। আর হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলের দুই শিশুসহ দশ জন নিহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় ৩৮ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে আড়াই হাজার। হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়া হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভাষ্য, হামাস এখন পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি পক্ষে ১০ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ