গাজা শহরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় গণমাধ্যমের অফিস ধ্বংসের বিষয়ে দেশটির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে সংবাদ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এর আগে গতকাল শনিবার (১৫ মে) বিমান হামলায় গাজা শহরের একটি ভবন ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল। সেখানে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), আল-জাজিরাসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের অফিস ছিলো।
ইসরায়েলের হামলার আগাম সতর্কতা হিসেবে আল-জালা নামক টাওয়ারের ১২ তলা থেকে নিরাপদে সরে আসেন এপির সাংবাদিক ও অন্যান্যরা। এর প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই তিনটি ভারী মিসাইল ভবনটিতে আঘাত হানে। এতে হামাস ও ইসারায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাতের সংবাদ প্রচার ব্যাহত হয়।
এপির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী গ্যারি প্রুইট বলেন, আজকের (শনিবার) এই ঘটনার কারণে গাজায় যা ঘটেছে তার থেকেও অনেক কম জানবে বিশ্ব। তিনি বলেন, আমেরিকার সংবাদ সংস্থাটি ইসরায়েল সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে আসছিল।
আল-জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোস্তাফা সোয়াগ এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ এবং সাংবাদিকদের সংবাদ পরিবেশন বন্ধ করার সুস্পষ্ট চেষ্টা বলে দাবি করেছেন। গাজায় ধ্বংস হওয়া ভবনটিতে কুয়েতের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটির কার্যালয় ছিলো।
ভিয়েনাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট নির্বাহী পরিচালক বারবারা ট্রিয়নফি বলেন, সংবাদ সংস্থাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি সশস্ত্র সংঘাতের সময়েও তেমনটা হয় না। এটি মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক শিষ্টাচারে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তবে, এর জবাবে ইসারায়েল বলছে, তাদের সেনারা জানিয়েছে ভবনটির অভ্যন্তরে হামাস তাদের কার্মকাণ্ড চালাচ্ছিল। সাংবাদিকদেরকে তারা মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাদের দাবির পক্ষে কোনো ধরনের প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামলা চলবেই। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার টিভিতে দেওয়া এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, যত দিন প্রয়োজন, তত দিন হামলা চলবে। সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে সবকিছু করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। নেতানিয়াহুর ভাষ্য, চলমান সংঘর্ষের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী দায়ী নয়; বরং হামলাকারীরা এ জন্য দায়ী। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
গত সোমবার সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ১৪৯ জন নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের মধ্যে ৪১ জন শিশু। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, আজ রোববার ভোরে গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনিরা তেল আবিবকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে। তেল আবিব থেকে অনেকে নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে গেছেন।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু গত সপ্তাহে। জেরুজালেমের আল-আকসায় পবিত্র জুমাতুল বিদা আদায়কে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। বলা হচ্ছে, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ঘটনা। বড় ধরনের সংঘর্ষের সূচনা হয় সোমবার পূর্ব জেরুজালেমে। সেই সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ এবং মিসরের দূতেরা পরিস্থিতি শান্ত করতে কাজ করছেন। তবে এ পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসবে। ইতিমধ্যে তেল আবিব পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সম্পর্কবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হাদি আমর।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ