মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলাপের পরপরই ফিলিস্তিনি ভূমিতে আক্রমণ জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলি সরকারপ্রধান। জানা যায়, সাম্প্রতিক উত্তেজনার জেরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে দ্বিতীয়বার ফোন করেছেন বাইডেন। এদিকে, ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি।
এর আগে, গত বুধবারও নেতানিয়াহুর কাছে ফোন করে ইসরায়েলের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট।
এ সময় তিনি বলেন, এ অঞ্চলে খুব দ্রুত সহিংসতার অবসান হবে বলে আশা করছেন তিনি।
ইসরায়েলিদের সমর্থন জানিয়ে সেদিন তিনি বলেন, হাজার হাজার রকেট ছোড়া হলে তা থেকে আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে ইসরায়েলের। অথচ ইসরায়েলের আক্রমণে শতাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনির মৃত্যু নিয়ে টুঁ শব্দ নেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে!
স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ জারি রাখলেও গাজায় হামলা জোরালো করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। শুক্রবার পঞ্চম দিনে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল বাহিনীও হামলায় অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
গানবোট, যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গাজায় বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। এ হামলায় এখন পর্যন্ত ১০৯ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর কথা জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার গাজার বাসিন্দারা ঈদুল ফিতর উদযাপন করলেও রক্ষা পায়নি ইসরায়েলি বিমান হামলা থেকে।
শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
তিনি বলেন, গাজার শাসক দল হামাসকে চরম মূল্য দিতে হবে। তবে হামাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে কঠিন শিক্ষা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
নেতানিয়াহুর বিবৃতির কিছুক্ষণ পরই গাজার আকাশে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা গেছে। গাজা থেকে পাল্টা রকেটও ছোড়া হচ্ছে। ইসরায়েলের আশকেলন, আশদুদ, বিরশেবা ও ইয়াভনে শহর লক্ষ্য করে রকেট ছোড়া হচ্ছে।
‘যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ’ হামলার হুমকি ইসরায়েলের
বাইডেনের সঙ্গে দু’বার ফোনে কথা বলার পর শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, গাজায় ‘যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ’ হামাসের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাবে ইসরায়েল।
অবশ্য বৃহস্পতিবার রাত থেকেই উপত্যকায় আকাশপথের পাশাপাশি স্থল আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী।
আল জাজিরার খবর অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলি হানায় গত কয়েকদিনে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন অন্তত ১১৯ ফিলিস্তিনি। বাদ যায়নি কোমলমতি শিশুরাও।
ইসরায়েলিদের আক্রমণে অন্তত ৩১টি শিশু মারা গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৮৩০ ফিলিস্তিনি।
শুধু তা-ই নয়, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিক্ষোভ দমনেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু। সহিংসতার অভিযোগ তুলে তাদের দমনে রাস্তায় সেনা নামানোর পরিকল্পনা করছেন তিনি।
এমনকি ফিলিস্তিনিদের ঠেকাতে বাড়তি ক্ষমতা পাওয়ার জন্য ইসরায়েলি সংসদে প্রস্তাবও উত্থাপন করতে চলেছেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এ নেতা।
সমর্থন জানাল ভারত
সংঘর্ষ থামাতে জাতিসঙ্ঘের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইসরাইলেরই পক্ষ নিয়েছে ভারত। ফিলিস্তিন থেকে ইসরাইলের উদ্দেশে ছোড়া রকেট হামলার ‘বিশেষ’ নিন্দা করেছেন ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ে ১৫ সদস্যের জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
তবে জাতিসঙ্ঘে দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি টুইট করেছেন, ‘পূর্ব জেরুসালেমের ঘটনা নিয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে আমি উল্লেখ করেছি, সব ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে গাজা থেকে রকেট হামলার নিন্দা করছি। শোকজ্ঞাপন করা হয়েছে ইসরাইলে ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যুতে। এখনই সব পক্ষকে থামতে হবে।’
ফিলিস্তিনের রকেট হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইসরাইলে থাকা ভারতীয় নাগরিক সৌম্যা সন্তোষের। কেরলের ইডুক্কির জেলার বাসিন্দা তিনি। দক্ষিণ ইসরাইলের উপকূলীয় শহর আশকেলনে এক বৃদ্ধার সেবাযত্নের দায়িত্বে ছিলেন। ইসরাইলের দিকে শতাধিক রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনিরা। তাতে মৃত্যু হয় সৌম্যাসহ আরো তিনজনের।
এসডব্লিউ/এসএস/২০২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ