দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ ফুরিয়ে আসছে। গত ১০ বছরে কোথাও কয়লা বা গ্যাসের বড় মজুদ পাওয়া যায়নি। এখন যে মজুদ আছে তা শেষ হবে ২০৩০ সালে, এমনটাই জানিয়েছেন স্রেডা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, জ্বালানির জন্য গ্যাসের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা প্রায় ৭০ শতাংশ।
প্রায় ৩ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী খন্দকার আবদুস সালেক, যিনি কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আসছেন, তিনি জানান, ‘গ্যাসের রিজার্ভ তো আর এভাবে হঠাৎ শেষ হয়ে যায় না। একটা স্টেজে এসে ড্রপ করতে থাকে। যে হারে গ্যাসের রিজার্ভ কমছে তাতে ২০২১ সাল থেকে দ্রুত কমে যাবে। আর ২০৩০ সাল নাগাদ একেবারেই ফুরিয়ে যাবে যদি না নতুন গ্যাস রিজার্ভ খুঁজে পাওয়া যায়।’
নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভরতা
গ্যাসের মজুদ শেষ হলে আমদানির বিকল্প থাকবে না। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প অনুসন্ধান করছে সরকার। একারণে জীবাশ্ম জ্বালানি তথা ফসিল তেলের সংস্থানে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা কাটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে সরকার।
ইতোমধ্যে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) একটি খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এই রোডম্যাপে আগামী ২০ বছরে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
সরকার চিন্তা করছে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা সংরক্ষণ করতে হবে। এই পরিকল্পনা সফল হলে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা জানা জরুরি। আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রধান উৎস সূর্যালোক। এজন্য আমরা একটি সোলার রোডম্যাপিং করছি। পাশাপাশি এই বিদ্যুৎ সংরক্ষণের জন্য নীতিমালাও করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুতে নতুন প্রযুক্তি হওয়াতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি পড়তো। কিন্ত এখন কমে আসছে। একইসঙ্গে এখন সৌর প্যানেলের উৎপাদন দক্ষতাও বাড়ছে। এখন প্যানেল বসাতে কম জমির প্রয়োজন হয়।
সীমিত জলবিদ্যুৎ
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে সাধারণত এ ধরনের জ্বালানি ব্যবহারের তিনটি ক্ষেত্রের মধ্যে জলবিদ্যুতের উৎস খুব সীমিত।
দেশের একমাত্র জল বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে কাপ্তাইতে। বছরের একটি সময় জলের অভাবে যা চালানো যায় না।
দেশের আর কোনও নদী অববাহিকাতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়। অন্যদিকে বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনা থাকলেও তা খুব বেশি কাজে লাগানো যায়নি।
ফলে এই উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কতোটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে দেশে সৌরবিদ্যুতের বিস্তার ঘটেছে।
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে সৌরবিদ্যুৎ
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অন্য একটি সমস্যা হলো, দেশে সারা বছর গড়ে সাড়ে চার ঘণ্টা থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কড়া সূর্যালোক পাওয়া যায় না। গড়ে ১৯ ঘণ্টাই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না।
ফলে এর ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশের সোলার মিনি গ্রিডে এভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। তবে এটি খুবই ছোট পরিসরে। এখন লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে সৌরবিদ্যুতের বড় বড় প্রকল্প করছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে পারলেও সংকট কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে।
বিপদে গোটা বিশ্ব
শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বই জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প খুঁজছে। ইতোমধ্যে পশ্চিমা দেশগুলো অনেকটা এগিয়েছে। এশিয়ার মধ্যে চীন এবং ভারত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে নতুন নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, আগামী ৫০ বছর পর পৃথিবীর জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ ফুরিয়ে যাবে। এই সময়কে টার্গেট করেই এখন সারা বিশ্ব নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। বাংলাদেশও পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে তাল মেলাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণ করছে।
প্রসঙ্গত, যে দেশে বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সার কারখানা থেকে শুরু করে ছোট-বড় শিল্প এমনকি গৃহস্থালী কাজকর্ম পর্যন্ত গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে ভবিষ্যতের এই সংকটের চেহারাটা কী হবে, তার ইঙ্গিত বাংলাদেশিরা ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৫১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ