ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০৩ জন। সেখানে উদ্ধারকাজ চলছে। খবর এএফপির।
উল্লেখ্য, ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা ‘লাগ বাওমর’ পালনের জন্য মাউন্ট মেরনে জড়ো হন। ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় ছুটির দিন হিসেবে এটি পালন করা হয়। এই ধর্মীয় উৎসবেই ঘটে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
লাজার হাইম্যান নামে একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা এটি।’
কর্তৃপক্ষ ওই ধর্মীয় উৎসবে ১০ হাজার মানুষ সমবেত হওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। আয়োজকেরা বলছেন, ৬৫০টির বেশি বাসে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মেরনে যান। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় প্রায় ৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন ছিল।
যেভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা
শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, অনুষ্ঠান স্থলে কোনো কিছু ভেঙে পড়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের বিভিন্ন সূত্র জানায়, সিঁড়িতে চলাচলের সময় কয়েকজন পিছলে পড়ে যান। সে সময় তাদের ওপর আরও অনেকে পড়লে ঘটনাস্থলেই অনেকে প্রাণ হারান।
ইসরায়েল ও পশ্চিম তীরে অবস্থিত প্রাচীন জুডিয়া অঞ্চলের দ্বিতীয় শতাব্দীর ঋষি রেবাই শিমন বার ইয়োচাইয়ের সমাধি রয়েছে ইসরায়েলের মেরন শহরে।
ইহুদিদের অন্যতম পবিত্র স্থান মেরনে প্রতি বছর ইয়োচাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধির পাশে অর্থোডক্স ইহুদিরা ‘লাগ বোমার’ নামে উৎসবে যোগ দেন। ধর্মীয় ওই উৎসবে সারা রাত আগুন জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন তারা।
আজ শুক্রবারও হাজার হাজার তীর্থযাত্রী ’লাগ বোমার’ উৎসবে অংশ নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, সরু এক গলির ভেতর দিয়ে অনেক মানুষ গাদাগাদি করে হাটঁছেন।
ইসরায়েলের জরুরি চিকিৎসাসেবা সংগঠন ‘ইউনাইটেড হাতজালাহর’ এক সদস্য ইয়েহুদা গতলেইব বলেন, সরু গলিতে হাঁটার সময় প্রচণ্ড ভিড়ে বেশ কয়েকজন মানুষ একে অপরের ওপর পড়েন। তাদের অনেকে ওই সময় জ্ঞান হারান।
গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এখানে গণজমায়েতের ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। টিকাদান কর্মসূচিতে সাফল্যের কারণে ইসরায়েলে করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এ বছর সেটি খুলে দেওয়া হয়। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এটি ছিল বড় গণজমায়েত।
ইসরায়েলের উদ্ধার সেবা বিভাগের মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘ঘটনাস্থলেই ৩৮ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন।’
জিআইভি হাসপাতালের একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, তারা ৬টি লাশের তথ্য রেকর্ড করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই ঘটনাকে ‘বড় বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং আহত লোকজনের জন্য তিনি প্রার্থনা করছেন বলে জানান।
ইসরায়েলের উদ্ধারকারী দল দ্য মেগান ডেভিড অ্যাডম জানায়, এ পর্যন্ত ৪৪ জন নিহত হয়েছে। আহতদের অবস্থাও গুরুতর। উদ্ধারকাজ চলছে।
আহতদের উদ্ধার তৎপরতা
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থার (এমডিএ) পক্ষ থেকে বলা হয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানটিতে পদদলিত হয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১০৩ জন। তাদের উদ্ধারে কাজ চলছে।
আহতদের মধ্যে ৪০ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে কয়েক ডজন অ্যাম্বুলেন্স ও ছয়টি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এমডিএ।
সেনাবাহিনী বলছে, মাউন্ট মেরনে উদ্ধারকাজের জন্য ইসরায়েলের বিমানবাহিনী বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে। তাদের সঙ্গে চিকিৎসক দল রয়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা জানান, আহত কয়েকজনকে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে তেলআবিব ও জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনী হতাহত লোকজনকে উদ্ধারে সহায়তা করছে। ঘটনাস্থলেই অনেকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। আহতদের সরিয়ে নিতে এবং ঘটনাস্থল জনশূন্য করতে কাজ করছে ইসরায়েল পুলিশ ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সেনারা।
মেরনের ফোন সেবা ঠিক মতো কাজ করছে না। সেখানে হাজার হাজার মানুষ তাদের পরিবার-স্বজন ও জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো একসঙ্গে ফোন করার চেষ্টায় থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৫৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ