মহামারি করোনার প্রকোপে ভারতের অবস্থা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশটির বিপর্যয়কর কোভিড সংকট দিন দিন আরও গভীর হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে দৈনিক সংক্রমণ ও প্রাণহানির সংখ্যা। আর প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্তের ও মৃতের বিশ্বরেকর্ড ভাঙছে দেশটি। করোনায় বিপর্যস্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলছে বিধানসভা নির্বাচন; মহামারি থামাতে হিমশিম খাওয়া এই পরিস্থিতিতে সবকিছু উপেক্ষা করে করোনা রোগীদেরও বরং ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমত বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুর্শিদাবাদে এক ভার্চুয়াল র্যালি উদ্বোধন করে গতকাল রোববার তিনি এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
মমতা বলেন, করোনা রোগীদেরও উচিত রাজ্যের নির্বাচনে ভোট দিতে আসা। মুখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। করোনা নিয়ে কেউ চিন্তা করেবেন না, আমি আপনাদের সঙ্গে প্রহরীর মতো আছি।
মহামারির সংকট মাথায় রেখে গত সপ্তাহে সব রাজনৈতিক সভা বাতিল করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদিও চারটি সমাবেশ বাতিল করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মোদি শুধু কথাই দেন, পাশে থাকেন না। যদি ভ্যাকসিন কার্যক্রম তদারকি করা হতো তবে মহামারি এই পর্যায়ে যেত না। ফ্রিতে তিনি ৮০টি দেশকে ভ্যাকসিন পাঠিয়েছেন।
‘অথচ নিজ দেশে করোনা মহামারির সত্যিকার পরিস্থিতি ঢাকতে চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে শ্মশানের চারপাশে দেয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। আসাম-ত্রিপুরায়ও একই কাজ করা হয়েছে।’
মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে করোনা রোগীদের জন্য ৬০ শতাংশ শয্যা বরাদ্দ রাখতে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন—‘এক দেশ, এক নেতা’। তাহলে টিকার মূল্য এক না কেন? কেন কেন্দ্রের জন্য এক দাম, আর রাজ্যগুলোর জন্য আরেক দাম? কেন সব টিকা গুজরাট ও উত্তরপ্রদেশে যাচ্ছে?
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ভারতকে। প্রতিদিনই মৃত্যু প্রায় ৩ হাজার ছুঁইছুঁই। শনাক্ত হওয়া রোগী গত কয়েকদিনে সাড়ে তিন লাখের নিচে নামেনি। এমন অবস্থাতেই আজ সোমবার সকাল ৭টা থেকে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ।
ভোট দিতে আসবেন মুখ্যমন্ত্রীও। তার যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তাই মিত্র ইনস্টিটিউশনে করা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। প্রতিবার ভোটের সময় বিকেলে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিতে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নন্দীগ্রামের প্রচারে গিয়ে আঘাত পাওয়ার পর পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে তার। ফলে হুইলচেয়ারে করেই ভোটের প্রচার করেছেন গত একমাস যাবৎ। এ বার ভোট দেওয়ার পালা। কিন্তু পায়ে প্লাস্টার থাকায় হুইলচেয়ারে করেই ভোট দিতে আসবেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ২৯৪ আসন। ভোট হচ্ছে আট দফায়। আজ সপ্তম দফার ভোট নেওয়া হচ্ছে পাঁচ জেলার ৩৪ আসনে। ৩৬টি আসনে ভোট নেওয়ার কথা থাকলে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর আসনের দুই প্রার্থী করোনায় মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট গ্রহণ হচ্ছে না। আজ দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমান, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ কলকাতায় ভোট হচ্ছে। শেষ বা অষ্টম দফার ভোট নেওয়া হবে ২৯ এপ্রিল চার জেলার ৩৫টি আসনে। জেলা চারটি হলো মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও উত্তর কলকাতা। আর আগামী ২ মে এই আট দফা নির্বাচনের ফলাফল একযোগে ঘোষণা করা হবে।
আজ ভোট নেওয়া হচ্ছে ১১ হাজার ৩৬৭টি ভোটকেন্দ্রে। ভোটার ৮১ লাখ ৮৭ হাজার ১৯ জন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই ৩৬ আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৪টি, কংগ্রেস ১২টি এবং বাম দল ১০টি আসন। বিজেপি কোনো আসন পায়নি। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ৩৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ১৪টি আসনে, বিজেপি ১৬টি আসনে এবং কংগ্রেস ৪টি আসনে। বাম দল কোনো আসনে এগিয়ে থাকতে পারেনি।
আজকের এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। ৩৪টি নির্বাচনী এলাকার ভোটকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আজকের ভোটকে নির্বিঘ্ন করতে গোটা ভোটকেন্দ্র এলাকায় ৬২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। আর রাজ্য পুলিশ থেকে নিয়োগ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৩৩৮ জন পুলিশ সদস্য।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ