ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চের তাণ্ডবে জড়িত হেফাজতীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেছেন মুফতি আবদুর রহিম কাসেমী। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে এক লিখিত বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হেফাজতের এই নেতা।
মুফতি আবদুর রহিম কাসেমী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ার জামিয়া ইলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষাসচিব। তিনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পদে ছিলেন।
মতাদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে গত বছরের ১ ডিসেম্বর তাকে মৌখিকভাবে দল ও মাদ্রাসার সব দায়িত্ব থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তবে কেন্দ্রীয় বা জেলা হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে লিখিত কোনো বহিষ্কারাদেশ তিনি এখনও পাননি বলে জানিয়েছেন।
আবদুর রহিম কাসেমীকে ওই ঘটনার পর থেকে মাদ্রাসা ও হেফাজতের অভ্যন্তরীণ বা সর্বজনীন কোনো সভা, সমাবেশ, মিছিল বা মাহফিল, কোথাও নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
শুক্রবার সকালে সাড়ে ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে হেফাজতের এই নেতার সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। কিন্তু আকস্মিক তিনি সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যটি জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠান।
লিখিত বক্তব্যে কাসেমী উল্লেখ করেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের ডাকে যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তা নজিরবিহীন ও অমানবিক। দেশ ও জনগণের জানমালের ক্ষতি কোনোভাবেই ইসলামসম্মত হতে পারে না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এ সমস্ত কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকি এবং আমার তত্বাবধানে পরিচালিত সমস্ত মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের এ সমস্ত দেশ ও ইসলামবিরোধী কাজে যোগদান না করতে বাধ্য করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতে ইসলামের সকল কার্যক্রম ও জাতীয় এবং জেলা কমিটির পদসমূহ থেকে পদত্যাগ করছি। যাদের প্ররোচণায় দেশ ও জনগণের জানমালের এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি’।
তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতের সব কার্যক্রম ও জাতীয় এবং জেলা কমিটির সব পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেন, বর্তমানে তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নাসিরনগরে জামিয়া কাসেমীয়া মাদ্রাসা, বাসুদেবের জামিয়াতুল হাসনাইন মাদ্রাসা, কসবায় জামিয়া দারুল উলূম মাদ্রাসা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া কাসেমীয়া মাদ্রাসা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। কোনোভাবে জামিয়া বা হেফাজতের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত না।
আব্দুর রহিম কাসেমী বলেন, ‘বিভিন্ন স্থাপনায় হরতাল চলাকালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাতে আমি এবং আমার মাদরাসার কোনো ছাত্র অংশগ্রহণ করেনি। আমি হেফাজতের চলমান কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নই। তাদের নাশকতামূলক কার্যক্রম অবৈধ মনে করি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার খবরে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালান হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। এসময় পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব, জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়, মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌরমিলনায়তন ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরসহ ৩৮টি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ১২ জন নিহত হন।
পরে এসব ঘটনায় হাটহাজারী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়।
এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় হওয়া দুই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হাটহাজারী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হওয়া দুটি মামলা তদন্ত করবে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা।
এর আগে পুলিশ সদর দফতরের সিদ্ধান্তে গত সোমবার ২৩টি মামলার সঙ্গে হাটহাজারী থানায় হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুটি মামলার দায়িত্ব সিআইডিকে দেয়া হয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ