দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসা অব্যাহত রয়েছে। এবার পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে থাকা নেক্সাস টেলিভিশনের দুই কর্মীর মোটরসাইকেল আটকে তাদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ স ম মাহাতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
সংবাদ মাধ্যম জাগো নিউজের মাধ্যমে জানা যায়, মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় মোটরসাইকেলে চড়ে মিরপুর গোল চত্বর হয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন নেক্সাস টেলিভিশনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আবুল আলা মওদুদি এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার আসিফ হাসান। সে পথে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট পরিচয়পত্র চাইলে তা দেখান ওই দুই গণমাধ্যমকর্মী। তখন তাদের ছেড়ে দেন সার্জেন্ট।
কিছু দূর যেতেই দুইজন এক মোটরসাইকেলে যাতায়াত করায় তাদের আটকে দেন ডিসি মাহাতাব উদ্দিন। এরপর তাদের ‘ভুয়া সাংবাদিক’ বলে মামলা দেয়ার জন্য সার্জেন্টকে নির্দেশনা দেন। দুজনে এর প্রতিবাদ জানালে তাদের মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে যান তিনি। পরে তিন ঘণ্টা পর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় মিরপুর মডেল থানা থেকে বাইকটি ফেরত নিয়ে আসেন তারা।
এ বিষয়ে নেক্সাস টেলিভিশনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আবুল আলা মওদুদি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি এবং আমার অফিসের কলিগ দুজন আসছিলাম। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে প্রথমে পুলিশ আটকানোর পর ছেড়ে দেয়। এরপর গাড়িতে দুইজন চলাচল করার কারণে মিরপুরের ডিসি আ স ম মাহাতাব উদ্দিন একটু সামনে আমাদের আটকে দেন। পরে গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দেয়ার পর আইডি কার্ড দেখতে চান। সেটি দেখানোর পর তিনি বলেন ‘এটা ভুয়া’। এরপর তিনি গাড়ির চাবি নিয়ে নেন এবং কর্তব্যরত সার্জেন্টকে মামলা দিতে বলেন। কিন্তু আমি মামলা না নিয়ে পাশে সরে এসে মোবাইল ফোনে অফিসকে বিষয়টি জানাচ্ছিলাম। তখন ডিসি মাহাতাব উদ্দিন বাইক নিয়ে চলেন যান।’
আবুল আল মওদুদি অভিযোগ করে বলেন, ‘বাইকের খোঁজ করলে সার্জেন্ট জানান মিরপুর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর থানায় যাওয়ার পর তারা ডিসি মাহাতাব উদ্দিনের কাছে পাঠান। ডিসির কাছে গেলে তিনি আবার মডেল থানায় পাঠান। পরে অফিসের তরফ থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানানো হলে সেখান থেকে ফোন আসে, তখন তারা বাইকটি ফেরত দেন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আমাকে বাইকের জন্য ঘুরতে হয়েছে। অথচ আমার সকল কাগজপত্র সঙ্গেই ছিল।’
এ গণমাধ্যমকর্মীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘এটা জেনে কী করবেন? সার্জেন্ট ওদের মোটরসাইকেলের কাগজ দেখতে চেয়েছিলে। কাগজপত্র না থাকায় ওরা মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে চলে গেছে। পরে তারা কাগজপত্র দেখিয়ে থানা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে।’
‘ভুয়া সাংবাদিক’ বলে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে দুইজন ছিল, করোনাকালে দুইজন মোটরসাইকেলে যাওয়া যাবে না। এরপরও তারা যখন সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছে নেক্সাস টেলিভিশনের কর্মী, কিন্তু এমন কোনো টেলিভিশন নাই, তাই মনে হয়েছে তারা ভূয়া। পরে কাগজপত্র চাইলে তারা মোটরসাইকেল রেখেই পালিয়ে যায়। পরে থানা থেকে কাগজপত্র দেখিয়ে গাড়ি নিয়ে গেছে।’
এর আগে জরুরি সেবা-খাতে নিয়োজিত কর্মীদের যাতায়াতে মুভমেন্ট পাস লাগবে না জানানো হয়েছিলো, তবুও পেশাগত দায়িত্বে পালনের সময় গণমাধ্যম-কর্মীদের নামে মামলা ও জরিমানা করেছে পুলিশ।
গত ১৩ এপ্রিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ‘মুভমেন্ট পাস’ উদ্বোধনের সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের সড়কে চলাফেরার জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ প্রয়োজন হবে না। তবে অন্য পেশার যারা প্রয়োজনে বাইরে বের হতে চান তাদের এই পাস নিতে হবে।’ আইজিপি বলেন, ‘সরকারি প্রজ্ঞাপনে সাংবাদিকসহ জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চলাফেরায় বাধা দেওয়া হয়নি। তাই সাংবাদিকদের এই পাস সংগ্রহ করতে হবে না।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, পুলিশের বেওপরোয়া হয়ে ওঠার কারণেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। একইসাথে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও থানার অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে অভিযুক্তকে বিভিন্ন কৌশলে রক্ষা করে থাকেন। পুলিশের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার ফলে রাষ্ট্রে একদিকে যেমন অরাজকতা তৈরী হয়েছে অন্যদিকে দুর্বৃত্তরাও নিজেদের অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অপকর্ম দিনদিন এতোই বেড়েছে যে, নিজেদের ঘর সামলাতে গিয়ে অন্যান্যদের সামলানোর জন্য পুলিশ আদৌ কোনো সময় পাবে কিনা সেবিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ