পূর্বঘোষণা অনুসারে হাটহাজারী, ঢাকা ও ব্র্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মী ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হতাহতের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার (০২ এপ্রিল) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে হেফাজতে ইসলাম। বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। মসজিদসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখছেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব।
সমাবেশে তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার আতঙ্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘরে কোনো পুরুষ থাকতে পারছেন না। কিন্তু প্রকৃত দোষীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। উল্টো ওইদিনের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার-হয়রানি করা হচ্ছে।’
জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ‘যিনি মাদরাসায় হামলা করলেন, সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ককটেল মারলেন, গুলি করে মানুষ হত্যা করলেন, তাদের কিছুই হচ্ছে না। স্থানীয় এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও তার বাহিনী অবাধে ঘুরছেন। আমরা তাদের গ্রেফতার চাই।’
তিনি বলেন, ‘করোনা আতঙ্কের কথা বলে এখন মাদরাসা বন্ধের পাঁয়তারা চলছে। গত রমজানের মতো তারাবি ও নামাজ বন্ধের পাঁয়তারা চলছে। এ দফায় এমন করা হলে কঠোর আন্দোলন হবে। ধর্মপ্রাণদের জুজুর (করোনা) ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’
হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, ‘সরকার হেফাজতের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে নাটক বানাচ্ছে। মাদরাসা থেকে ছুরি উদ্ধার করে ছাত্রদের সন্ত্রাসী বানাতে চাচ্ছে। সেগুলো কোরবানির ছুরি ছিল। যেগুলো না হলে দেশের পশুপাখির গোশত হালালভাবে খেতে পারতেন না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। আগামী বাংলাদেশ হেফাজতের বাংলাদেশ। যত অপপ্রচার চালান হেফাজতকে রুখতে পারবেন না। হেফাজত কারও পক্ষে নয়। দেশের প্রয়োজনে, ইসলামের প্রয়োজনে হেফাজত মাঠে রয়েছে, থাকবে। তিন দিনে ২০ জন শহীদ হয়েছেন। প্রয়োজনে আরও রক্ত দেব।’
হেফাজতের সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ‘ভারতের মান রক্ষায় ২০ জন ভাইকে শহীদ করা হয়েছে। ৫০ বছর আগে পাকিস্তানি শাসকরা প্রাণ নিয়েছে। এখন ভারতীয় বাহিনীর জন্য রক্তে রঞ্জিত হলো বাংলাদেশ। নরেন্দ্র মোদিকে সুরক্ষিত রাখতে বাঙালির তাজাপ্রাণ কেড়ে নেয়া হলো।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন হেফাজতের নায়েবে আমির আব্দুর রব, নায়েবে আমির আব্দুল কাদের প্রমুখ।
গেলো শুক্রবার ও এর পরের তিন দিন হেফাজতে ইসলামের নরেন্দ্র মোদি বিরোধী কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সহিংসতায় অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। যদিও হেফাজতের দাবি, এ সংখ্যা ১৮ জন।
কর্মসূচিকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারিতে। অভিযোগ রয়েছে হেফাজতের কর্মীরা এসব এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর, অগ্নি-সংযোগ করে।
তবে আজকের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে বলে দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম। এরই মধ্যে কোনো সমাবেশে আসা বা ফেরার পথে কোথাও মিছিল হবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সংগঠনটির ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের ফেসবুক পেজে বিক্ষোভ কর্মসূচি সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়। সেখানে কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের নির্দেশনার পাশাপাশি আরো দুটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এগুলো হলো- কোথাও কোনো সমাবেশে আসা বা ফেরার পথে মিছিল হবে না এবং নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করে সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হবে।
হেফাজতের আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচির ধরন জানিয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আল্লামা মামুনুল হক নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলেছেন, ‘পূর্বঘোষিত ওই বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বাদ জুমা সমাবেশ হবে। সমাবেশে আসা বা ফেরার পথে মিছিল হবে না। নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করে সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হবে।’
গত রবিবার (২৮ মার্চ) দিনব্যাপী সহিংস হরতাল পালন শেষে বিকেলে রাজধানীর পল্টনে হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী আজকের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সমাবেশ ঘিরে দুপুর থেকেই মসজিদের উত্তর গেটের ভেতরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় ও এর আশপাশের এলাকায় বাড়তি পুলিশ সদস্যদের অবস্থান দেখা গেছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জলকামান ও সাজোয়া যান।
প্রেসক্লাব, কাকরাইল মোড়, গুলিস্তান জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকাতেও পুলিশ সদস্যদের অবস্থান দেখা যায়।
এছাড়া, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এদিকে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। যে কোনো ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৮
আপনার মতামত জানানঃ