হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ যারা ইসলামের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের জন্য ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী পিপলস পার্টি। তাদের আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী পিপলস পার্টি। তা না হলে আগামী ৫ এপ্রিল( সোমবার) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে ধর্মীয় এই সংগঠনটি৷
আজ বৃহস্পতিবার(০১ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইসলামী পিপলস পার্টি আয়োজিত ‘ইসলামের নামে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত’-শীর্ষক আলোচনা সভা থেকে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইসমাইল হোসাইন।
মাওলানা মো. ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, অযথা জ্বালাও-পোড়াও করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। ইসলামের স্বার্থে বা ইসলামিক কোনো দাবি আদায়ের ক্ষেত্রেও ইসলামের প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি এবং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। এক্ষেত্রে দেশে ইসলামী ধর্মীয় দলগুলোকে আরো সচেতন হওয়া দরকার।’
মামুনুল হকসহ সহিংসতার নির্দেশদাতা হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,‘সরকারের প্রতি জোর দাবি থাকবে, ইসলামের নামে যারা এ সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে তাদেরকে আগামী চার দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে না পারলে আমরা আগামী ৫ তারিখে সকাল সন্ধ্যা হরতাল দেব।’
হরতালের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই হরতাল কঠোরভাবে পালন করা হবে। রিকশা-সাইকেল কোনো কিছুই চলতে দেব না। সেই সঙ্গে মামুনুল হকের বাড়ি ঘেরাও করা হবে। তিনি লালবাগে থাকুন বা যেখানেই থাকুন, তার বাড়ি ঘেরাও করে তাকে ছিনিয়ে এনে প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়া হবে। যত রক্তের বিনিময় হোক তাকে আমরা ছিনিয়ে আনব।’
মাওলানা মো. ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান চলাকালে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এসব তাণ্ডবে মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ নিরীহ বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। ধর্মীয় একটি সংগঠনের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ইসলাম কতটুকু সমর্থন করে কিংবা ইসলামে আদৌ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কোনো সুযোগ আছে কি না, তা অবশ্যই পরিষ্কার হওয়া দরকার।’
অনুষ্ঠানে ইসলামী চিন্তাবিদ আলহাজ্ব মো. হাজী হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘একাত্তর সালে পাকিস্তানিরা যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজত ইসলাম ২০২১ সালে এসেও সেভাবেই তাণ্ডব চালিয়েছে। মামুনুল হক নামের যে ব্যক্তিটি, তিনি মাওলানা নয়। মামুনুল হককে আমি ফাসেক বলে দাবি করছি। তাকে আইনের আওয়াতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা কাজী শাহ মোহাম্মদ ওমর ফারুক, আলহাজ্ব মো. হাজী হাবিবুল্লাহ, নড়াইলের পীর হারুনুর রশিদ মিরন, মাওলানা কাজী আব্দুল কাইয়ুম, হাফেজ মাওলানা আব্দুল আজিজ, হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ তাহেরুল ইসলাম, হাফেজ মো. আবুল কালাম, হাফেজ মাওলানা মো. ইব্রাহিম, মুফতি মাওলানা মো. তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। এসময় সহিংসতায় বেশ কয়েকজনের প্রাণহানী ঘটে। ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও ও ভাঙচুর করা হয়। হামলা হয় একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান ও থানায়।
এর আগে গত ২৯ মার্চ এক মানবন্ধনে একই আল্টিমেটাম দিয়ে মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ ঐক্য পরিষদ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে আগামী সোমবার(০৫ এপ্রিল) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ ঐক্য পরিষদ।
মানববন্ধনে নেতা-কর্মীরা জানান, হেফাজতের বিক্ষোভে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাধিক প্রতিকৃতি ভাঙচুরসহ সরকারি-বেসরকারি অন্তত অর্ধশত স্থাপনা ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব নাশকতার কারণে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হককে আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেপ্তার করার জন্য আলটিমেটাম দিয়েছে ওলামা মাশায়েখ ঐক্য পরিষদ। অন্যথায় আগামী সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালন করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলেন, দেশের সবকটা রাজনৈতিক দলই স্বার্থের রাজনীতি করে। ফলে আদর্শের বাইরে গিয়ে তারা স্বার্থোদ্ধারে মরিয়া। হেফাজত ইসলামও তেমনি একটি দল। হেফাজতে ইসলামে ঐক্যমত ও আদর্শের বালাই নেই বলে দলটির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে জানান তারা।
তারা বলেন, ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা দলটি ইতিমধ্যে ধর্মের সংস্পর্শ থেকেও দূরে সরে গেছে। আওয়ামী লীগের সংস্পর্শে কিংবা প্রশ্রয়ে এসে তারাও ক্ষমতার রাজনীতিতে নেমেছে। তাদের এই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কুফল গত কয়েকদিনের ব্যাপক জ্বালাও পোড়াও তাণ্ডব দেখে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মন থেকেও ইতিমধ্যে উঠে গেছে দলটি। মোদীবিরোধী আন্দোলনে নেমে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন প্রতিকৃতিতে আগুন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সংগীতাঙ্গনে ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক তাণ্ডবে বিরক্ত ধর্মপ্রাণ দেশবাসী। তারা ধর্মের নামে দেশে এই ব্যাপক অগ্নি নির্যাতন মেনে নিতে পারেনি।
বিশ্লেষকরা বলেন, হেফাজত ইসলাম কেবলি একটি রাজনৈতিক দল। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মত ধর্মকে ব্যবহার করলেও ধর্ম নিয়ে তাদের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই যতটা আছে ক্ষমতার্জন নিয়ে, দেশবাসী ইতিমধ্যে তা উপলব্ধি করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ