মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী এখনো আলোচনা-সমালোচনা চলছে। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কিভাবে সংস্কার করা যায় এনিয়ে চলছে জোর জল্পনা কল্পনা। এসবের মাঝেও প্রতিদিনকার নিয়মিত সংবাদের মতো মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক মাদ্রাসাছাত্রের ধর্ষণের সংবাদ এসেছে। শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা বেলগাছি গ্রামের হেফজখানার শিক্ষক আবু মুসাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে গ্রামবাসী। শনিবার (২০ মার্চ) রাত ১১টার দিকে হেফজখানার শিক্ষক আবু মুসাকে মসজিদে আটকে রেখে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেন তারা।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি গ্রামের মৃত জামাল আলীর ছেলে হাফেজ আবু মুসা পোয়ামারী মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি পার্শ্ববর্তী বেলগাছি জামে মসজিদে নামাজ পড়ান ও হেফজখানায় শিশুদের পড়ান। শনিবার বিকেলে ১২ বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন তিনি। পরে শিশুটি বাড়ি ফিরে তার দাদাকে বিষয়টি বলে দেয়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে রাতে গ্রামবাসী অভিযুক্ত আবু মুসাকে আটকে রেখে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। হাফেজ আবু মুসা ইতোপূর্বেও একই অপরাধ করলেও সেবার মাফ চেয়ে পার পেয়েছিলেন।
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগীর কবীর জানান, রাতে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষককে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবু মুসা তার অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। রবিবার সকালে থানায় মামলা দায়ের করবে শিশুটির পরিবার।
এদিকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে শিশুছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগে মিল্লাত হোসেন (২৫) নামের কওমি মাদ্রাসার এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৯মার্চ) রাতে অভিযান চালিয়ে উপজেলার চরলরেন্স মুসলিমপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মিল্লাত উপজেলার মধ্য চরমার্টিন এলাকার আলী হোসেনের ছেলে এবং মুসলিমপাড়া সুলতানিয়া কওমি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার নয় বছর বয়সী শিশুটি স্থানীয় মুসলিমপাড়া সুলতানিয়া কওমি মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মিল্লাত হোসেন ছাত্রটিকে বিভিন্ন সময় যৌন নির্যাতন করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ১১ মার্চ দুপুরে মাদ্রাসায় কেউ না থাকার সুযোগে মিল্লাত শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। এতে রক্তক্ষরণ হলে শিশুটি ভয়ে প্রথমে কাউকে কিছু জানায়নি। দু’দিন আগে শিশুটির তার মাকে ঘটনাটি খুলে বললে পরিবারের পক্ষ থেকে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় শুক্রবার শিশুটির মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এহেন ঘটনা একদিকে যেমন মেনে নেওয়া যায় না অন্যদিকে লোকসমাজেও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও ছাত্রদের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। তারা বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েও যদি সন্তান নিরাপদ না থাকে তবে অভিভাবকের মনে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ে আতঙ্ক তৈরি হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ