বরিশালে এক যুবককে আটকের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অফিসকক্ষে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে যুবকের হাতে ইয়াবা গছিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এমন এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে আটকের পর হাতে ইয়াবা দিয়ে যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার।
আজ বুধবার (১০ মার্চ) সকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় প্রধান অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডুকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের স্টাফ অফিসার ও সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার সকালে এ নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ভিডিওচিত্রটিতে দেখা যায়, হাতকড়া পরিয়ে নিজ কক্ষে এক যুবককে বেধড়ক পেটাচ্ছেন বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবদুল মালেক। এ সময় ওই যুবকের চিৎকার-আর্তনাদ করেও তার নির্যাতন থেকে মুক্তি পায়নি। মারধরের একপর্যায়ে যুবকের মাথা পা দিয়ে চেপে কয়েক দফা পেটানো হয়। এ সময় যুবকের হাতকড়া খুলে তার হাতে ইয়াবা দিয়ে নেওয়া হয় স্বীকারোক্তি। নির্যাতনের এক পর্যায়ে পানি চাইলে করা হয় নিষ্ঠুর আচরণ। সঙ্গে ছিল অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী যুবক মারুফ সিকদার বরিশাল নগরীর কাউনিয়া বিসিক রোডের বেগের বাড়ির এলাকার বাদশা সিকদারের ছেলে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে পরিদর্শক আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে মারুফকে নগরীর কাউনিয়া বিসিক রোড থেকে আটক করা হয়। পরে মারুফের কাছ থেকে পাঁচ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে ওই রাতেই নগরীর কাউনিয়া থানায় একটি মামলা করেন পরিদর্শক আব্দুল মালেক।
ওই মামলায় ১৭ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান মারুফ। দিনমজুর বাবা-মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে মারুফ ছোট। মাদক উদ্ধারের ওই মামলায় মারুফের পরিবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাথে আপোসের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
মারুফের স্বজনরা জানান, ২২ সেপ্টেম্বর রাতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় মারুফকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে। এরপর মারুফের পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে মারুফের বিরুদ্ধে মাদক মামলা দিয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। ওই মামলায় ১৭ দিন কারাগারে ছিলেন মারুফ। পরে জামিনে থেকে মুক্ত হলেও পরবর্তীতে হয়রানির আশঙ্কায় নির্যাতনের বিষয়টি গোপন রাখেন মারুফ ও তার পরিবারের সদস্যরা।
তবে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আব্দুল মালেক তালুকদারের দাবি, মারুফ সিকদার কাউনিয়া এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আর তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ সত্য নয়। তার শরীর তল্লাশি করে ইয়াবা পাওয়া গিয়েছিল। তার সঙ্গে মাদক কেনাবেচায় অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কি-না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তবে নির্যাতন করা হয়নি।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বরিশালের অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডু গণমাধ্যমকে জানান, ওই যুবকের নামে তিনটির মতো মামলা আছে। তবে নির্যাতনের একটি ভিডিও দেখা গেছে। নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিতোষ কুমার কুন্ডু জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরিদর্শক আব্দুল মালেক তালুকদারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয় পাঠাতে পারব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিযুক্তকে আঘাত করার অধিকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাখে না। দেশে আইন আছে, বিচার বিভাগ আছে। আদালতের রায়ের বাইরে অভিযুক্তকে প্রশাসনের আঘাত করার অধিকার নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা যুবককে আটক করে যে নির্যাতন করেছে, ইয়াবা গছিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে এটা একদিকে যেমন আইন পরিপন্থী অন্যদিকে অমানবকি। মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ