ধূমপানে বিষপান—সবারই জানা। তবু আজও বহু মানুষ ধূমপানের নেশায় ডুবে আছেন। নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা তাঁরা হয়তো ভাবেন না। কিন্তু অন্যদেরও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলেন। দেশে ধূমপানসংক্রান্ত আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। তাই গণপরিবহন বা জমায়েতের স্থানে হামেশাই চলে ধূমপান।
বাড়িতে ধূমপান করলে বাড়ির সদস্যরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। ফ্যান-এসি চালিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে এই বাতাস বিশুদ্ধ করা যায় না। এমনকি বারান্দা কিংবা পৃথক ঘরে ধূমপান করলেও অন্যরা ঝুঁকিমুক্ত থাকেন না। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে চার হাজারের বেশি রাসায়নিক উপাদান, যার অন্তত ২৫০টিই ক্ষতিকর। পরোক্ষ ধূমপান কেবল স্বাস্থ্যগত বিষয়ই নয়, বরং এর সঙ্গে অন্যের ঝুঁকিও জড়িত বলে এটি নৈতিক এবং সামাজিক সমস্যা হিসেবেও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
ধূমপান করা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক জেনেও অনেকে এর নেশা কাটাতে পারেন না। ক্যানসারসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায় ধূমপানের অভ্যাস।
জানলে অবাক হবেন, যারা প্রতিদিন ধূমপান করেন তাদের মস্তিষ্ক দিন দিন সংকুচিত হয়ে যায়। অর্থাৎ মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে যায়। ২৮ হাজার মানুষের উপর করা নতুন এক গবেষণা এমনটিই জানাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা আগেই দেখেছেন, যারা ধূমপান করেন তাদের মস্তিষ্ক অধূমপায়ীদের তুলনায় আয়তনের দিক থেকে ছোট হয়। তবে ধূমপানের ফলে মস্তিষ্ক সংকুচিত হয় কি না বা ছোট মস্তিষ্কের লোকেদের ধূমপান শুরু করার সম্ভাবনা বেশি থাকে কি না তা স্পষ্ট ছিল না।
এবার গবেষকরা একটি শক্তিশালী প্রমাণ দিয়েছেন যে, ধূমপান মস্তিষ্ককে সংকুচিত করে। চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল প্রিপ্রিন্ট ডাটাবেস মেডরিজিভে পোস্ট করা হয় এই গবেষণা প্রতিবেদন।
বিজ্ঞানীরা ইউকে বায়োব্যাংক থেকে ব্রেন ইমেজিং ডেটা বিশ্লেষণ করেন এই গবষণায়। ইউকে-ভিত্তিক অংশগ্রহণকারীদের জেনেটিক ও স্বাস্থ্যগত তথ্যভাণ্ডার হলো এই বায়োব্যাংক।
মস্তিষ্কের স্ক্যান ছাড়াও, গবেষকরা সংগৃহীত অংশগ্রহণকারীদের স্ব-প্রতিবেদিত ধূমপানের অভ্যাস বিশ্লেষণ করেন। গবেষণা কার্যক্রমে ২০০৬-২০১০ সাল ও ২০১২-২০১৩ সালে অর্থাৎ দুইবারের সমীক্ষা বিশ্লেষণ করা হয়।
দ্বিতীয়বারে, অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কও ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) পদ্ধতি ব্যবহার করে চিত্রিত করা হয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা দেখেন, যারা অনিয়মিত ধূমপান করেন তাদের তুলনায়, যারা প্রতিদিন ধূমপান করেন তাদের মস্তিষ্কের আয়তন গড়ে ০.৪ কিউবিক ইঞ্চি (৭.১ কিউবিক সেন্টিমিটার) ছোট ছিল।
মস্তিষ্কের আয়তনের এই পার্থক্যের মধ্যে রয়েছে ০.৩ কিউবিক ইঞ্চি (৫.৫ সিসি) মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ কমে যাওয়া, যা মস্তিষ্কের কোষ বা নিউরনের বিশাল দেহ ধারণ করে।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, অতীতে যারা প্রতিদিন ধূমপান করতেন ও বর্তমানে যারা বেশি বেশি ধূমপান করছেন তাদের মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থের পরিমাণে আরও বড় পার্থক্য দেখা গেছে। অর্থাৎ ধূমপান ছেড়ে দিলে মস্তিষ্ক সংকোচনের মাত্রাও কমে।
বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, যারা বেশি সময় ধরে ধূমপান ছেড়েছিলেন তাদের মস্তিষ্কে সামান্য বেশি ধূসর পদার্থ ছিল, যারা সম্প্রতি ছেড়ে দিয়েছিলেন তাদের তুলনায়। অর্থাৎ ধূমপান বন্ধ করলে মস্তিষ্ক ছোট হওয়ার ঝুঁকিও কিছুটা কমে।
গবেষকরা জানান, যেহেতু মস্তিষ্কের সংকোচন স্নায়বিক রোগের সঙ্গে যুক্ত তাই বেশিরভাগ ধূমপায়ীরই আলঝেইমারের মতো কঠিন ও দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
আমেরিকার পেনিসেলভিয়ার পেন স্টেট কলেজ অব মেডিসিনের গবেষক দাজিয়াং লিউ জানান, ‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। অনেক তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করে ও বিভিন্ন সমীক্ষা বিশ্লেষণ করে দীর্ঘদিন ধরে আমরা গবেষণাটি করি। এর ফলাফল জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।’
‘তবে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ধূমপান ও মস্তিষ্কের আকারের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। তবে কিছু ওষুধ আছে যা মস্তিষ্কের টিস্যু ক্ষয় রোধে সম্ভাব্য সাহায্য করতে পারে’, বলে জানান এই গবেষক।
এসডব্লিউএসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ