প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মূল্যায়ন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিগণ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। এমন আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়টিতেই কয়েকদিন আগে গবেষণায় জালিয়াতির অভিযোগে কয়েকজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী শিক্ষককে শাস্তি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন কলঙ্কের তেমনি দেশের জন্যও। এখন শোনা গেলো প্রাচ্যের এই অক্সফোর্ডে অধ্যয়নরত ১৬৩ শিক্ষার্থীকে জালিয়াতির দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে। ডিজিটাল জালিয়াতি ও অবৈধ পন্থায় ভর্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১২ জন শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১৫১ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার (১ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক সভায় শৃঙ্খলা পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সিন্ডিকেটের এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের (ডিবি) সদস্যসচিব এ কে এম গোলাম রব্বানী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ডিবির সুপারিশের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২জন শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে সিন্ডিকেট। একই অভিযোগে আরও দুজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১৫১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ বিভিন্ন অভিযোগে সাত কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থীকেও স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
কয়েকদিন আগেও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় আরও সাত শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড (ডিবি)। এই অভিযোগে এর আগে ডিবির সুপারিশের ভিত্তিতে ৭৮ জন শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা দুজন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আগে দুই দফায় আজীবন বহিষ্কৃত ৭৮ জন, বহিষ্কারের সুপারিশ হওয়া ১২ জন এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া ২ জন—এই ৯২ জনের প্রত্যেকেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) করা মামলার আসামি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ৯২ জন শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন এবং পাবলিক পরীক্ষা আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো ঐতিহ্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কেলেঙ্কারিতে ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বিদ্যাপীঠটি নিয়ে আশঙ্কায় প্রকাশ করে তারা বলেন, যে হারে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিচের দিকে ক্রমশ নেমে যাচ্ছে, এর চূড়ান্ত পতনের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দেশের মানুষের বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে যে গর্ব ও প্রত্যাশা তা পূরণে একদিকে যেমন ব্যর্থ হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাচ্ছে। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরীর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১১
আপনার মতামত জানানঃ