বিশেষ প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাসকে ‘ডিজিজ অব গড’ আখ্যা দেয়া যেতে পারে। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের উড়বার যে ইচ্ছাটা গোটা মানব জাতিকে শাসন করেছে সম্ভাব্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই, সেই ইচ্ছার মুখে জিন পরিয়ে দিয়েছে কোভিড-১৯। গত একশ বছরের মধ্যে পৃথিবী করোনার মতো এমন অতিমারীর মুখোমুখি হয়নি। বিশ্ব মোড়লদের কপালে চিরস্থায়ী ভাঁজের সুব্যবস্থার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য অবস্থাকে করে তুলেছে আরও ভয়াবহ। পরিস্থিতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছে ভ্যাকসিনকে জড়িয়ে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং এর পেছনে মদদ দিচ্ছে নতুন কিছু অনুষঙ্গ।
বেশ অনেক আগে থেকেই ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতির সাথে ন্যাশনালিজম, কলোনিয়াল পলিটিক্স, ডি-কলোনাইজেশন, একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিল। করোনা ভ্যাকসিনের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য, ক্ষমতার সেন্ট্রালাইজেশন, নেপোটিজমের বিভৎসতা, লোকাল পলিটিক্স। আর বহুকাল ধরে চলে আসা করাপশন তো তার বহাল তবিয়তেই আছে। সোয়াইন ফ্লু-র সময়েও একই ভাবে ভ্যাকসিনের আগাম বুকিং করেছিল ধনতান্ত্রিক দেশগুলি। যেকারণে ভুগতে হয়েছিলো লো ইকোনমির দেশগুলোকে। সময়ের অনেক পরেই আফ্রিকার মতো দেশগুলিতে ভ্যাকসিন পৌঁছেছিল।
করোনা ভ্যাকসিনের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য, ক্ষমতার সেন্ট্রালাইজেশন, নেপোটিজমের বিভৎসতা, লোকাল পলিটিক্স। আর বহুকাল ধরে চলে আসা করাপশন তো তার বহাল তবিয়তেই আছে।
এখনও ধুকছে পৃথিবী। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১ টায় আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটার থেকে জানা গেছে এ অব্দি সারা পৃথিবীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১২ লাখ ৬৮ হাজার ২০ জনে। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৮ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৮ কোটি ৬১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ জন সুস্থ হয়েছেন।
এখন অব্দি প্রায় ২২১ টি দেশ ও অঞ্চল করোনায় আক্রান্ত হলেও এখনও নয়টি দেশ রয়েছে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়নি বা প্রকাশ করেনি। এর মধ্যে আছে উত্তর কোরিয়া, কিরিবাতি, টংগো, তুর্কিমিনিস্তান এবং অন্যান্য। পাশাপাশি এখন অব্দি ২২১ টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে মাত্র ৭৭ টি দেশ ও অঞ্চল করোনার টিকা দিতে শুরু করেছে যার ৫৩ টি উচ্চ আয়ের, ২৪ টি মধ্য-নিম্ন আয়ের দেশ ও অঞ্চল যার মধ্যে বাংলাদেশেও রয়েছে। বাংলাদেশ গত ৭ই ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান শুরু করে।
ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজমের কারণ
প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এখনও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে আছে এবং একই সাথে ক্রমাগত জিনের গঠন পাল্টে হয়ে উঠেছে আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য। জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় যখন প্রথম করোনা সংক্রমণ ঘটেছিলো, তখন সেই ভাইরাসের জিনগত গঠন ছিল চীনের করোনা ভাইরাসের মতো। কিন্তু ফিনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের এগন অজার স্থানীয় রোগীদের শরীরে সম্পূর্ণ আলাদা এক জিনগত গঠনের করোনা ভাইরাস দেখতে পান। ভাইরাসের পৃষ্ঠে প্রায় ১৩০০ অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক হিসেবে থাকে। কিন্তু করোনা ভাইরাস এতোটাই মিউটেশনের ভিতর দিয়ে গেছে যে এতে অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রায় ৬১৪। পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রকারও ডি থেকে জি হয়ে যেতে লক্ষ করেছেন। করোনা ভাইরাসের প্রতিনিয়ত এই মিউটেশন তাকে আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য করে তুলছে। আর এ কারণেই বিশ্ব মোড়লেরা কোমর বেঁধেই ভ্যাকসিন সংগ্রহের যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। যার কারণে লো ইকনমির দেশগুলোকে এখানেও অন্যের মুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হচ্ছে।
ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজমের চালচিত্র
প্রায় ৫৭ মিলিয়ন টীকা প্রস্তুত হয়েছে, যার বড় একটি অংশ নিজেদের দখলে নিতে ব্যস্ত আছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ছ’টি তাবড় ওষুধ প্রস্তুত সংস্থার সঙ্গে কয়েক কোটি বিলিয়ন ডলারের ভ্যাকসিন চুক্তি সেরে রেখেছে। চুক্তি অনুযায়ী ৮০০ মিলিয়ন ডোজের ভ্যাকসিন পাবে আমেরিকা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন পৌঁছোবে এর পরেই। তাদের ঠিক পেছনে আছে চীন এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। ব্রিটেনও একাধিক ওষুধ প্রস্তুত সংস্থার সঙ্গে ৩৪০ মিলিয়ন ডোজের ভ্যাকসিন চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ইউরোপের অনেক দেশই এমন চুক্তি করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরায়েলও তাদের জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে টীকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। এই সংখ্যা যথাক্রমে ৮১% ও ৫৪%। কানাডার সব মানুষকে টিকা দেবার জন্য যত ভ্যাকসিন প্রয়োজন দেশটি তার পাঁচ গুণ বেশি টিকা মজুদ করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী ৮০০ মিলিয়ন ডোজের ভ্যাকসিন পাবে আমেরিকা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন পৌঁছোবে এর পরেই। তাদের ঠিক পেছনে আছে চীন এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। ব্রিটেনও একাধিক ওষুধ প্রস্তুত সংস্থার সঙ্গে ৩৪০ মিলিয়ন ডোজের ভ্যাকসিন চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ইউরোপের অনেক দেশই এমন চুক্তি করেছে।
আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা এর তথ্য অনুযায়ী, এ অব্দি সারা বিশ্বে প্রায় ১৭ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয়েছে। সবার উপরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা দিয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৬৪ লক্ষ। এরপরে চীন ৪ কোটি ৫২ লক্ষ, যুক্তরাজ্য ১ কোটি ৫১ লক্ষ, ভারত ৮২ লক্ষ, ইজরায়েল ৬৩ লক্ষ, ব্রাজিল ৫১ লক্ষ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৫০ লক্ষ ডোজ টিকা দিতে পেরেছে। যদিও জনসংখ্যার বিচারে সবচেয়ে এগিয়ে ইসরায়েল যারা ৭২.৬ শতাংশ, এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৫০.৬ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ২২.১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ১৫.১ শতাংশ, বাহরাইন ১৪.২ শতাংশ, জার্মানি ৪.৭ শতাংশ, তুরস্ক ৪.৪ শতাংশ, চীন ২.৮ শতাংশ, রাশিয়া ২.৭ শতাংশ, ব্রাজিল ২.৪ শতাংশ এবং ভারত ০.৬ শতাংশ. বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৯ লক্ষ ৬ হাজার এর উপরে টিকার ডোজ দিয়েছে যা দশমিক ০.৫৪ শতাংশ।
এভাবেই প্রকট হচ্ছে ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম। অপেক্ষাকৃত অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল দেশগুলোতে ভ্যাকসিন কবে পৌঁছোবে, পৌঁছালেও সামগ্রিক জনসংখ্যার অনুপাতে সেই সংখ্যাটা কতোটা স্বস্তির হবে, তা প্রকৃত অর্থেই চিন্তার বিষয়। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, লো ইকোনমির ১৩০টি রাষ্ট্র তাদের জনগণের জন্য ভ্যাকসিনের বন্দোবস্ত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে ভ্যাকসিনের এই কুৎসিত বৈষম্যের জন্য জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই বারবার ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজমের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা জানিয়েছে।
গুতারেস করোনা ভ্যাকসিনের গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশনের কঠোর সমালোচলা করে একে, ‘বর্বরভাবে অসম ও অন্যায়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন, সমগ্র ভ্যাকসিনের ৭৫ শতাংশই ১০টি দেশের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তিনি আরও বলেছেন, এ মুহূর্তে বিশ্বের কাছে করোনা ভ্যাকসিনের সুষম বন্টনই বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে, প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ করোনা ভ্যাকসিন সুবিধার আওতায় রয়েছে। ‘কোভিড রেজিলিয়েন্স র্যাংকিং’-এ ডিসেম্বরে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির দিক থেকে ভারত-পাকিস্তান এই দু’দেশ বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে।
ভ্যাকসিনের এই অসম বন্টনের কারণ ব্যকরণ
চীনের উহানে প্রথম কোভিড-১৯ সনাক্ত হবার পরই বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ শুরু করে এবং ওই সময়েই বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভ্যাকসিনের সুষম বন্টনের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই উচ্চ আয়ের দেশগুলো ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করতে থাকা ওষুধ কোম্পানিগুলোর সাথে ভ্যাকসিনের জন্য আগাম চুক্তি করতে শুরু করে। ভ্যাকসিন ডেভেলপের কাজে তাদের বিনিয়োগ থাকায়, ভ্যাকসিন তাদেরকেই প্রথম সরবারাহ করার চুক্তি সাক্ষরিত হয়।
এ প্রসঙ্গে জর্জটাউন ল গ্লোবাল হেলথ প্রোফেসর লোরেন্স গস্টিন এবং ওয়ান, দারিদ্রের বিরুদ্ধে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান, কথা বলেছে একই সুরে। তাদের বক্তব্য, ধনী দেশগুলো আগাম ক্রয়ের চুক্তি সাক্ষর করেছে। উৎপাদিত ভ্যাকসিনের অধিকাংশই তারা কিনে নিয়েছে। এরফলে কম ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহ এ বছরে ভ্যাকসিন নাও পেতে পারে। ধনী দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার তুলনায় অতিরিক্ত ভ্যাকসিন মজুদ করে এই সমস্যা তৈরি করেছে।
কিছু দেশ এতোটাই বেশি ভ্যাকসিন সংগ্রহে রেখেছে, যে তাদের দেশবাসীরা একের অধিকবার ভ্যাকসিন নিতে পারবে। কানাডা তার জনসংখ্যার ৫০০% ভ্যাকসিন মজুদ করেছে। ব্রিটেন ৩২৭%, চিলি ২৪৪% নিউজিল্যান্ড ২৪২% এবং অস্ট্রেলিয়া ২২৬%। কোন ভ্যাকসিন অধিক কার্যকরী হবে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এই নিয়ে নিশ্চয়তার অভাবই অতিরিক্ত ভ্যাকসিন সংগ্রহের এই প্রতিযোগিতার অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোভ্যাক্স: ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজমের উল্টোস্রোত
স্বল্প আয়ের দেশগুলোর চোখে কোভ্যাক্স এক রবিনহুডের নাম। এর নেতৃত্বে আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপআই) ও দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (গ্যাভি)। এটি একটি যৌথ আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। এটি ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বে ২০০ কোটি ডোজ নিরাপদ ও কার্যকর টিকা সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কোভ্যাক্স সারাবিশ্বে সুষ্ঠুভাবে ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য ৯৮ টি ধনতান্ত্রিক দেশ এবং ৯২ টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়েছে।
গরিব দেশগুলোও যাতে টিকা পায়, সেই লক্ষ্যেই গত এপ্রিলে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি বা কোভ্যাক্স নামের এই প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়, যাতে অর্থায়ন করছে বিভিন্ন দাতা দেশ, বিশ্ব ব্যাংকের মত বহুজাতিক সংস্থা এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মত দাতব্য সংস্থা।
মডেল অনুযায়ী, ধনী দেশগুলো নিজেদের ফাইন্যান্সে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করবে এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো ন্যূনতম অর্থে ভ্যাকসিন নিতে পারবে। গ্যাভির একজন মুখপাত্র জানান, আমাদের উদ্দেশ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে কোভ্যাক্সে অংশগ্রহণকারী ১৯০টি দেশের মধ্যে ২ বিলিয়ন নিরাপদ ও কার্যকরী ভ্যাকসিন সরবরাহ করা।
কোভ্যাক্স ইতিমধ্যে ১.১২ বিলিয়ন ডোজেজের ক্রয় নিশ্চিত করেছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকেই ভ্যাকসিন সরবরাহের কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে জি-সেভেন শীর্ষ নেতাদের একাধিক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন কোভ্যাক্স উদ্যোগে ৪০০ কোটি ডলার অঙ্গীকার করেছেন৷ এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য টিকা উৎপাদন, সরবরাহ ও বণ্টনের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গড়ে তুলতে আগ্রহী৷ দরিদ্র দেশগুলির জন্য করোনা টিকার ব্যবস্থা করতে কোভ্যাক্স নামের আন্তর্জাতিক উদ্যোগে তিনি ৪০০ কোটি ডলার অঙ্গীকার করতে চলেছেন৷ আপাতত ২০০ কোটি এবং পরে ধাপে ধাপে বাকি অর্থ দেওয়া হবে৷
এদিকে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেবার লক্ষ্য স্থির করেছে ইইউ কমিশন। প্রবল চাপের মুখে ইইউ কমিশন গত বুধবার করোনা সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে আরও কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা করছে৷ কমিশনের প্রেসিডেন্ট ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, এখনো পর্যন্ত ইইউ দেশগুলিতে তিন কোটি তিরিশ লাখ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত শুধু জাতীয় স্তরে জরুরি ভিত্তিতে টিকা অনুমোদনের সুযোগ থাকায় ইইউ স্তরে করোনা টিকা অনুমোদনের কাজে বাড়তি সময় লেগেছে৷ নতুন আইন প্রণয়ন করে ভবিষ্যতে ইইউ-কেও সেই ক্ষমতা দেবার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি৷
অ্যামেরিকার মডার্না কোম্পানির কাছে ইইউ আরও ৩০ কোটি টিকার অর্ডার দিয়েছে৷ এর অর্ধেক চলতি বছর এবং বাকিটা আগামী বছর হাতে পাওয়ার কথা৷ বায়োনটেক-ফাইজারও ইইউ-কে বাড়তি ২০ কোটি টিকা সরবরাহ করবে৷ ফলে ইইউ প্রায় ৪৫ কোটি জনসংখ্যার জন্য সব মিলিয়ে মোট ২৬০ কোটি টিকার অর্ডার দিলো৷ বাড়তি টিকা অন্যান্য দেশগুলোকে দিতে চায় ইইউ৷
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে করোনার চিকিৎসা ছিলো অপ্রতুল। হাসপাতাল, চিকিৎসক ছিলো অপর্যাপ্ত। এবার ক্যাপিটালিস্ট মাফিয়াদের ছড়ি ঘুরানোর কারণে ভ্যাকসিনের সুষম বন্টন যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে তাদেরকে আরও ভয়াবহ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যা বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনীতি, শ্রমবাজার এবং সমাজব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই দুর্যোগ থেকে কারও একার পক্ষে মুক্তি সম্ভব নয়। তাই বিশ্ব সংস্থাগুলোর পাশাপাশি উচ্চ আয়ের দেশগুলোকেও সামগ্রিকভাবে এই মহামারীর মোকাবেলা করার পরিকল্পনার নিয়ে এগোতে হবে।
এসডব্লিউ/২০১৬
আপনার মতামত জানানঃ