বিউটি পার্লারের এক কিশোরী কর্মীকে বাসায় আটকে রেখে দিনের পর দিন জোরপূর্বক দেহব্যবসা করানোর অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর সিটির এক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় গত মঙ্গলবার(১৬ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের (১৬, ১৭ ও ১৮) কাউন্সিলর রোকসানা আহমেদ রোজীসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ওই কিশোরী। মামলার পর ওইদিনই বাসন থানা পুলিশ কেয়ারটেকার নুরুল হককে গ্রেপ্তার করলেও ঘটনার পর থেকে কাউন্সিলর রোজী পলাতক ছিলেন। অবশেষে গতকাল শুক্রবার(১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে তাকে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি দল।
পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাাহ আল-মামুন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালায় র্যাব-১’র একটি দল। এ সময় ওই বাসা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর (১৬, ১৭ ও ১৮নং ওয়ার্ড) রোকসানা আহমেদ রোজীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর (১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ড) রোকসানা আহমেদ রোজীর মালিকানাধীন রহমান শপিং মলের আনন্দ বিউটি পার্লারে প্রায় চার মাস আগে চাকরি নেন নওমুসলিম ওই কিশোরী (১৬)। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানাধীন বড়য়াকোনা এলাকায়। পার্লারে চাকরির পাশাপাশি তাকে গ্রেট ওয়াল সিটি এলাকার রোজীর ভাড়া বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে বাধ্য করা হয়। প্রতিবাদ করলে তাকে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হতো। এরপর ওই কিশোরীকে বাসায় আটকে রেখে বাড়ির কেয়ারটেকার নুরুল হকের সহযোগিতায় প্রায় দু’মাস ধরে বিভিন্ন সময়ে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন কাউন্সিলর রোজী। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই কিশোরীকে দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানো হয়। একাধিকবার নারী কাউন্সিলরের বাসা থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটকে রেখে পতিতাবৃত্তির কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) কৌশলে বাসা থেকে পালাতে সক্ষম হয় কিশোরী। এ ঘটনায় ভিকটিম কাউন্সিলর রোজী ও বাড়ির কেয়ার টেকার নুরুল হকের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে জবরদস্তি করে সেবা প্রদান ও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, ভিকটিমকে পরিবারের জিম্মায় রাখার জন্য কাউকে না পাওয়ায় আদালত ভিকটিমকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তাকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর কিশোরী সংশোধনী প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাখাওয়াত হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন জানানোর সব প্রকার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আদালতের আদেশ পেলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন নারী ও কাউন্সিলর হয়েও কিশোরীকে নিজ বাড়িতে আটকে রেখে দীর্ঘ দুই মাস জোর করে পতিবৃত্তিতে বাধ্য করানো অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ ঘটনা আমাদের নৈতিক অবক্ষয় কতটা নিচে নেমেছে তারই এক উদাহরণ। তারা মনে করেন, জনপ্রতিনিধিত্ব এখন অর্থের এমনই এক ভাণ্ডার হয়ে গেছে যে, যেকেউ এখন জনপ্রতিনিধি হতে চায় কেবলি মোটা অংকের টাকা বগলদাবা করার জন্য। আর এজন্য তারা হেন কাজ নেই যা করতে না-পারেন। টাকা আসে এমন যেকোনো কাজ বিনাদ্বিধায়, বিনাসংকোচেই করে থাকেন। এসব আমাদের রাষ্ট্রের চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৮
আপনার মতামত জানানঃ