দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নারীরা আজ নিরাপদ নেই। এমনকি রেহাই পাচ্ছেন না শিক্ষকদের কুৎসিত হাত থেকেও। যেখানে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দেবে, দেশের নারীদের প্রতি সম্মান ও অধিকার আদায়ে সচেতন করে তুলবে সেখানেই ঘটেছে যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনা। তাও আবার দেশের অন্যতম বিদ্যাপিঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সানওয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে অধ্যাপক মো. সানওয়ার সিরাজকে অপসারন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে এক সিন্ডিকেট বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল বুধবার (১৭ ফেব্রয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ এ তথ্য জানান।
রহিমা কানিজ বলেন, মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেটে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানওয়ার সিরাজকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত নেয়।
রহিমা কানিজ আরও বলেন, অফিস বন্ধ থাকায় সানওয়ার সিরাজের কাছে অফিস আদেশ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পরবর্তী কার্যদিবসে অফিস আদেশের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানানো হবে। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর কোনো ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।
এদিকে, সানওয়ার সিরাজের দাবি, তিনি সুষ্ঠু বিচার পাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল’ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বুধবার বিকাল ৪ টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে’র প্রধান আমার বিরুদ্ধে এক পাক্ষিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমি বিভিন্ন সময় এই মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে নানা ডকুমেন্টস উপস্থাপন করতে চাইলেও সেল তা গ্রহণ না করেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এছাড়া, যিনি তদন্ত কার্যক্রম সেলের প্রধান তিনি একাধারে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সিন্ডিকেটেরও সদস্য। তাই সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সানওয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের এক ছাত্রী বিভাগের সভাপতি বরাবর যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দেন। তদন্তের জন্য ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠান বিভাগীয় সভাপতি।
অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল তদন্ত কাজ শুরু করে। এছাড়া তদন্ত চলাকালে সানওয়ার সিরাজকে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখার সুপারিশ করে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই সুপারিশের অনুমোদন দিয়ে সানওয়ার সিরাজকে সাময়িকভাবে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মান ক্রমশ হ্রাস পাওয়ার সাথে নৈতিকতার মানও ক্রমশ নিম্নগতিতে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ আসে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের খবরও আসে যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এক বার্তা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ যেমন একদিকে নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে নৈতিক অবক্ষয় ও অপরাধ। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নারীদের জন্যও নিরাপদ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর যৌন হয়রানি একদিকে যেমন লজ্জার অন্যদিকে ভয়াবহ এক বার্তাও বটে। শিক্ষকদের থেকেও ছাত্রীরা নিরাপদ নয়, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪০
আপনার মতামত জানানঃ