খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় ভারতের ইন্ধন বা ফ্যাসিস্ট শক্তির প্রভাব থাকার অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। সোমবার ঢাকায় ডিএমপির পাঁচটি থানার ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানের পরে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে গুলি চালিয়েছে। এসব অস্ত্র অনেক সময় বাইরে থেকে আসে। আমি দেশের নাম বলতে চাই না।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে সবার সহযোগিতা এবং সাহায্য প্রয়োজন।” স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি এখন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। খাগড়াছড়িতে অবস্থানরত পার্বত্য উপদেষ্টা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। “আমরা আশা করি, স্থানীয় জনগণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কাজ করলে পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হবে,” তিনি বলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে একটি মহল অনুষ্ঠানটি ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। প্রসঙ্গত, দুর্গাপূজার সময় পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন পর্যবেক্ষণমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
খাগড়াছড়ি, পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্প্রতি পাহাড়ি এলাকায় কিছু সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ঘটনার সময় কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে গুলি চালিয়েছে এবং অস্ত্র ব্যবহার করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মতে, এসব অস্ত্র প্রায়শই দেশের বাইরে থেকে আসে। তিনি কোনো দেশের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে তার মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, সরকারের নজর এ বিষয়ে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কিছু প্রভাব থাকতে পারে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, হামলার সাথে যুক্ত সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত চলছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
খাগড়াছড়ি এবং পার্বত্য অঞ্চলে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা জেলা পর্যায়ে সরাসরি নিরাপত্তা তদারকি করছেন। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। জরুরি পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো, স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি বজায় রাখা।” তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় জনগণকে শান্তিপূর্ণ থাকা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।”
খাগড়াছড়ির ঘটনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় নেতারা দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পার্বত্য অঞ্চলে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংহতি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে উৎসবকালীন সময়ে। স্থানীয় জনগণও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা আশঙ্কা করছেন, কোনো বাহ্যিক প্রভাব বা উগ্রমতের কারণে দুর্গাপূজা সহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান ব্যাহত হতে পারে।
বাংলাদেশে দুর্গাপূজা হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক উদযাপনের আয়োজন করা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন মিলে পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে জনসমাগম, মূল অনুষ্ঠান এবং রাস্তাঘাটে। পুলিশ কর্মকর্তারা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন, যাতে কোনো ধরনের অশান্তি বা সহিংসতা ঘটতে না পারে।
খাগড়াছড়ির ঘটনায় ভারতের ইঙ্গিত বা ফ্যাসিস্ট শক্তির প্রভাব থাকার অভিযোগ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। এই ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছে যে, পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা তাদের প্রধান লক্ষ্য। বিশ্লেষকরা মনে করেন, পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বিদ্যমান। বাহ্যিক প্রভাব এবং অস্ত্রের সরবরাহ এমন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। তবে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের সহযোগিতা থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশেষ করে উৎসবকালীন সময়ে কোনো ধরনের সহিংসতা বা ব্যাঘাতরোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কোনো দেশের নাম প্রকাশ করেননি, তবে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পার্বত্য অঞ্চলের সহিংসতা কখনও কখনও প্রতিবেশী দেশের প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা যে, পার্বত্য অঞ্চলকে শুধু স্থানীয় সমস্যা হিসেবে দেখা যাবে না, বরং আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতেও এর গুরুত্ব রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: পার্বত্য অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, জনসাধারণকে শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান, উৎসবকালীন নিরাপত্তা জোরদার করা এবং অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে তদন্ত চালানো। এই পদক্ষেপগুলো স্থানীয় জনগণকে নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দেয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পার্বত্য অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক প্রভাব, বাহ্যিক অস্ত্র সরবরাহ এবং স্থানীয় উত্তেজনা সবই সমন্বিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। দুর্গাপূজা এবং অন্যান্য উৎসবকালে নিরাপত্তা পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।
খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করে যে পার্বত্য অঞ্চলে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের ইন্ধন বা ফ্যাসিস্ট শক্তির প্রভাব থাকতে পারে। তবে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং জনগণের সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। দুর্গাপূজা এবং অন্যান্য সামাজিক উৎসবকে শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপন করতে সরকার ইতিমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। এই ঘটনায় সরকারের সতর্কতা, স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রম এবং জনগণের সহযোগিতা মিলিতভাবে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আপনার মতামত জানানঃ