পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে আব্দুর রুফ নামের এক শিক্ষকে হত্যার ঘটনায় টনক নড়েছে গোটা বিশ্বের। ব্লাসফেমির অভিযোগে এই শিক্ষককে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার কেচ জেলার তুরবাত শহরে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে গতকাল সোমবার (০৭ আগস্ট)।
দ্য ডন জানিয়েছে, আবদুল রউফ নামের ওই শিক্ষক তুরবাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়া একটি ভাষাকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখানে খণ্ডকালীন ইংরেজি শেখাতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি কবরস্থানের কাছে আবদুল রউফকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তিনি সে সময় কয়েকজন লোকের সঙ্গে আলেমদের একটি বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
সূত্র জানায়, ভাষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় আলেমদের কাছে আবদুল রউফের বিরুদ্ধে একটি বক্তৃতায় ব্লাসফেমি করার অভিযোগ এনেছিল।
ভাষাকেন্দ্রের অধ্যক্ষ সুধীর আহমেদ বলেন, গত শুক্রবার একদল আলেম ভাষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও শিক্ষক আবদুল রউফের কথা শোনেন। আবদুল রউফ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং জোর দিয়ে বলেন তিনি ব্লাসফেমি করেননি।
পরে আলেমরা জানান, তারা বিষয়টির সমাধান করবেন। আবদুল রউফকে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য একটি মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে যোগ দিতে বলেন।
মুফতি শাহ মীর বলেন, আমি আবদুল রউফকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। সেখানে শহরের শতাধিক আলেম বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মাদ্রাসায় পৌঁছানোর আগেই দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
এদিকে নিহত শিক্ষকের পরিবার থানায় কোনও মামলা দায়ের করেনি। তারা লাশ গ্রহণ করে দাফনের জন্য তাদের নিজ শহরে নিয়ে যায়। তবে পুলিশ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। জেলা পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ বালুচ বলেছেন, সব দিক বিবেচনা করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুররাম জেলার একটি স্কুলে এক ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। স্কুলটির অন্তত সাতজন শিক্ষককে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত সাত শিক্ষক পাকিস্তানের সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। এর আগের দিন একটি পৃথক হামলায় রাস্তায় নিহত হন ওই একই স্কুলের আরেক শিক্ষক, যিনি একজন সুন্নি মুসলিম ছিলেন।
একাধিক বন্দুকধারী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তখন জানায় পুলিশ। পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলার একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেওয়ার সময় সেখানে একদল বন্দুকধারী হামলা চালায়। এর আগের দিন গুলি করে শিক্ষক হত্যার ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই শিক্ষককে কুররাম জেলায় গাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে কর্মকর্তারা জানায়।
আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী গ্রামীণ এলাকা কুররাম জেলার স্কুলে ঠিক কী ঘটেছিল পুলিশও তার রহস্য এখনও উদঘাটন করতে পারেনি। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা আব্বাস আলী বলেন, আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি, এখন পর্যন্ত আমরা জানি না কে শিক্ষকদের হত্যা করেছে।
কর্মকর্তারা ধারণা করেছিল, কুররাম জেলায় যাকে গাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তিনি একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পুলিশের ওপরও হামলা হয়।
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিনা আলতাফ দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্কুলের ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীরা নিরাপদে রয়েছে। স্থানীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্দুকধারীরা যখন প্রবেশ করে এবং গুলি চালায় তখন স্কুলের শিক্ষকরা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সে সময় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি টুইটারে টুইট করে এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যা করেছেন।
এসডব্লিউএসএস/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ