ইয়েমেনে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টি ও ক্ষুধায় ভুগছে। এ ছাড়া দেশটিতে প্রতি ১০ মিনিটে একটি শিশু মারা যাচ্ছে। গত শুক্রবার জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউনিসেফের বিবৃতির বরাত দিয়ে আরব নিউজ বলেছে, ইয়েমেনে এই মুহূর্তে ১ কোটি ১০ লাখ শিশুর মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সংকট, অন্যদিকে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে দেশটির সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই নতুন এক তথ্য দিল জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ
চলতি বছরে ইয়েমেনের শিশুদের জন্য সহায়তা চালিয়ে যেতে কমপক্ষে ৪৮ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। কিন্তু জাতিসংঘ গত মাসে সুইজারল্যান্ডে একটি অঙ্গীকারমূলক সম্মেলনে ইয়েমেনের সমস্ত সংস্থার জন্য মাত্র ১২০ কোটি ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছে, যা ৪৩০ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে সহায়তা কমিয়ে দিতে বাধ্য হওয়ার আশঙ্কা করছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলেছে, ২০২২ সাল পর্যন্ত তারা তহবিল ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে এবং ২০২৩ সালের শুরুতেই ইয়েমেনের শিশুদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
ইউনিসেফ বলেছে, ‘যদি তহবিল না পাওয়া যায়, তাহলে ইউনিসেফ দুর্বল শিশুদের জন্য তার গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা কমাতে বাধ্য হতে পারে।’
২০১৪ সালে ইরান সমর্থিত হুতি মিলিশিয়ারা একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে নেওয়ার পর দেশটিতে সংঘাত শুরু হয়। পরের বছরের ২৬ মার্চ আরব জোট ইয়েমেনের বৈধ সরকারকে সমর্থন দিয়ে হুতিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়। তখন থেকে দেশটিতে সংঘাত চলছে।
২০১৫ সালে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ইয়েমেনে ১১ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত বা পঙ্গু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এই সংস্থা বলেছে, ইয়েমেনে ২ কোটি ১৭ লাখ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে ১১ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত কিংবা পঙ্গু হয়েছে। প্রায় আট বছর আগে দেশটিতে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। খবর এএফপির
বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক এই মানবিক সংকটে শিশুদের হতাহতের বিষয়ে ইউনিসেফ বলছে, ‘প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।’ সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘হাজারো শিশু প্রাণ হারিয়েছে, প্রতিরোধযোগ্য রোগ ও অনাহারে আরও হাজার হাজার শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।’
ইউনিসেফ বলছে, প্রায় ২২ লাখ ইয়েমেনি শিশু মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তাদের চার ভাগের এক ভাগের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। বেশির ভাগই কলেরা, হাম ও টিকায় প্রতিরোধযোগ্য অন্যান্য রোগের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
যুদ্ধে কিংবা এর কারণে পরোক্ষভাবে অনিরাপদ পানি পান, রোগের প্রাদুর্ভাব, ক্ষুধা ও অন্যান্য প্রভাবে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইউনিসেফের সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ ৩ হাজার ৭৭৪ শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ