আট বছর আগে শুরু হওয়া ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত ১১ হাজারেও বেশি শিশু নিহত বা পঙ্গু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। পাশাপাশি দিনের পর দিন ক্ষুধার জ্বালায় কাতরাচ্ছে ইয়েমেনের অসংখ্য নিরীহ মানুষ। এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে দেশটির শিশুরা। বিগত আট বছরের গৃহযুদ্ধ সেখানে এমন পরিস্থিতি ডেকে এনেছে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, নিহত ও পঙ্গু হওয়ার সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, ‘হাজার হাজার শিশু জীবন হারিয়েছে। এ ছাড়া কয়েক লাখ শিশু প্রতিরোধযোগ্য রোগ ও অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।’
ইউনিসেফ বলেছে, প্রায় ২২ লাখ ইয়েমেনি শিশু মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তাদের চার ভাগের এক ভাগের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। বেশির ভাগই কলেরা, হাম ও টিকায় প্রতিরোধযোগ্য অন্যান্য রোগের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। ইয়েমেনে ২০১৪ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে কিংবা এর কারণে পরোক্ষভাবে অনিরাপদ পানি পান, রোগের প্রাদুর্ভাব, ক্ষুধা ও অন্যান্য প্রভাবে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
২০১৪ সালে ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু হয় এবং দ্রুত ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করে নেয়। এরপর সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটসমর্থিত সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয় হুতিদের। যুদ্ধের কারণে এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনিরাপদ পানীয় জল, রোগের প্রাদুর্ভাব, ক্ষুধা এবং অন্যান্য কারণে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে।
জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৭৪ শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যুদ্ধ বিরতির জন্য জাতিসংঘ বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা করেছিল এবং গত ২ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হয়েছিল। পরে যুদ্ধরত পক্ষগুলো যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে অন্তত ৬২ শিশু নিহত বা আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির মেয়াদ নবায়ন করা হবে ইতিবাচক প্রথম পদক্ষেপ। এটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সহায়ক হবে। শেষ পর্যন্ত শুধু টেকসই শান্তিই পরিবারগুলোকে তাদের ছিন্নভিন্ন জীবন পুনর্গঠন এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা শুরুর সুযোগ করে দেবে।’
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ আরও জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরে চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইয়েমেন অন্তত ৩ হাজার ৯০৪ জন ছেলে শিশু ও ৯০ জন মেয়ে শিশুকে চেকপয়েন্টে কাজ করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। ইয়েমেনের এই মানবিক সংকট সামাল দিতে ৪৮ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা চেয়েছে ইউনিসেফ।
গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের হামলার মধ্যেই অপুষ্টিতে ভুগে প্রতিদিন ৩০০ শিশু মারা যাচ্ছে বলে জানায় স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংস্থা।
সৌদি জোটের আরোপিত অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা দেশটিতে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, জাতিসংঘ যাকে বিশ্বের সবচেয়ের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় বলে স্বীকার করেছে। গত বছর ইয়েমেনে ক্ষুধার মাত্রা নাটকীয় হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাহায্য সংস্থার এক জোট জানায়, আগের তুলনায় দেশটির ৬০ শতাংশের অধিক জেলায় জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি বিদ্যমান।
এসডব্লিউএসএস/১২৫০
আপনার মতামত জানানঃ