বিশ্বব্যাপী দাপট দেখিয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। তার প্রকোপ কাটতে না কাটতেই আরেকটি প্রাণঘাতী ভাইরাস ‘মারবার্গ’ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও-হু)।
আফ্রিকার দেশ ‘ইকুয়াটোরিয়াল গিনি’তে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি পাওয়া গেছে এবং তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে এই ভাইরাসের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ভাইরাসের উপসর্গ দেখা গিয়েছে আরও ১৬ জনের দেহে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও জানায়, ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রামক। ভাইরাসটি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সংক্রমণ অঞ্চলটিতে ইতোমধ্যে ২০০ জন সন্দেহভাজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
হু জানিয়েছে, ভাইরাসের স্ট্রেন, চিহ্নিতকরণ এবং চিকিৎসা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে আগের প্রাদুর্ভাব থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মারবার্গের মৃত্যুর হার ২৪ শতাংশ থেকে ৮৮ শতাংশের মধ্যে।
এখনও পর্যন্ত এর কোনও অনুমোদিত ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। ফলে, এক্ষেত্রে ওরাল বা আইভি রিহাইড্রেশন এবং নির্দিষ্ট লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে চিকিৎসাই ভরসা।
মারবার্গ ভাইরাস এর আগেও ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এর আগে ১৯৬৭ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টেও মারবার্গ ছড়িয়েছিল। এ ছাড়া সার্বিয়ার বেলগ্রেডেও ছড়িয়েছিল ওই ভাইরাস। পরে মারবার্গের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়।
মূলত পরীক্ষাগারে গবেষণা কাজ করতে গিয়ে এই ভাইরাস ছড়িয়েছিল। ওই সময় উগান্ডা থেকে জার্মানিতে বানর আনা হয়েছিল গবেষণার জন্য। এর থেকে সেখানে অসুখটি ছড়ায়। এরপর ২০০৮ সালে আবারও দুজন মারবার্গে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই দুজন উগান্ডার একটি গুহায় গিয়েছিলেন, যেখানে বাদুড় ছিল।
প্রথম যখন এই ভাইরাস ছড়ায় তখন মৃত্যুহার ছিল শতকরা ২৫ ভাগ। কিন্তু ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০০ সালে কঙ্গোতে এই ভাইরাস শতকরা ৮০ ভাগ রোগীর মৃত্যু ঘটিয়েছিল।
ইবোলার মতো মারবার্গ একটি ফিলোভাইরাস। ফলে বাদুড় থেকে মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে এর প্রাদুর্ভাব শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। অ্যাঙ্গোলা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ঘানা, গিনি, কেনিয়া, উগান্ডা এবং জিম্বাবুয়েতে অতীতে এই ভাইরাসের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
১৯৬৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ভাইরাসটির আক্রমণে ৪৭৪ জন রোগীর মধ্যে ৩৭৯ জনই মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর হার প্রায় ৮০ শতাংশ।বাদুড় থেকে আসা ‘মারবার্গ ভাইরাস’ ইবোলার মতোই মারাত্মক আকার ধারণ করে। ইবোলার তুলনায় অধিক প্রাণঘাতী।
এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। এটি ইবোলার থেকেও দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম। ‘মারবার্গ ভাইরাস’র কিছু লক্ষণ রয়েছে।
মানব শরীরে এই ভাইরাস ঢুকলে ২-২১ দিন ধরে চলে ইনকিউবেশন পিরিয়ড। এরপরই বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণত এক্ষেত্রে ধুম জ্বর, মাথাধরা, মাথাঘোরা, বমিবমি ভাব, বুকে ব্যথা, গলায় ব্যথা, তলপটে ব্যথা, ডায়রিয়া হতে পারে।
উপসর্গ একটু পুরনো হলে জন্ডিস, প্যাংক্রিয়াস ফোলা, হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া, লিভারের সমস্যা, মাল্টি অর্গান ফেইলিওর হতে পারে।
উল্লেখ্য, সাধারণত এই রোগের ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, পায়খানা, বমি-বমি ভাব, প্রচণ্ড জ্বর, পেশিতে ব্যথা থাকে। এছাড়াও এই ভাইরাসের লক্ষণ অনেকটা ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডের মতো। হাতে পায়ে ফুসকুড়িও দেখা দিতে পারে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ৭ দিনের মধ্যে রক্তক্ষরণের লক্ষণও দেখা দেয়।
ইবোলার মতো মারবার্গ একটি ফিলোভাইরাস। ফলে বাদুড় থেকে মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে এর প্রাদুর্ভাব শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। অ্যাঙ্গোলা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ঘানা, গিনি, কেনিয়া, উগান্ডা এবং জিম্বাবুয়েতে অতীতে এই ভাইরাসের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ