করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি ভারতে দেখা যাচ্ছে নতুন এক ভাইরাস। ‘টমেটো ফ্লু’ নামে এই নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ভারতে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত শতাধিক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মঙ্গলবার দেশটির সব রাজ্যে টমেটো ফ্লু বিষয়ক একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই রোগ হাত, পা এবং মুখের রোগের (এইচএফএমডি) একটি রূপ বলে মনে করা হচ্ছে। এটি মূলত ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে দেখা দেয়। তবে এটি প্রাপ্তবয়স্কদেরও হতে পারে।
এ রোগে আক্রান্ত হলে দেহের বিভিন্ন অংশে টমেটো আকৃতির ফোসকা দেখা দেয়। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় লাল রঙের ফোসকাগুলো ছোট থাকলেও পরবর্তীতে এগুলো ফুলে টমেটোর মতো হয়ে যায়। এ পর্যন্ত কেরালা, তামিলনাড়ু, হরিয়ানা ও ওডিশা রাজ্যে এই রোগে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়েছে।
লাইভমিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে ৯ বছররে কম বয়সী ১০০ টিরও বেশি শিশুর টমেটো ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। কেরালা রাজ্যের কুল্লামে গত ৬ মে টমেটো ফ্লু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। পরে এটি কেরালার আরিয়ানকাভু, আঞ্চাল ও নেড়ুভাতুরেও ছড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়, টমেটো ফ্লুর উপসর্গ বিষয়ে শিশুদের জানাতে হবে। এটি শিশুদের হাত, মুখ ও পায়ের (হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ) রোগের একটি ধরন। এতে সাধারণ জ্বর, মাথা ব্যথা, চুলকানি, স্ক্রিন র্যাশের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এ ধরনের উপসর্গের সঙ্গে করোনা, মাঙ্কিপক্স, ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়ায় সম্পর্ক নেই। সাধারণত শিশুদের অপরিষ্কার পোশাক, অপরিচ্ছন্ন জায়গায় থাকা বা হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়ার মতো বিষয়গুলো থেকে এটা ছড়াতে পারে।
এ রোগে আক্রান্ত হলে দেহের বিভিন্ন অংশে টমেটো আকৃতির ফোসকা দেখা দেয়। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় লাল রঙের ফোসকাগুলো ছোট থাকলেও পরবর্তীতে এগুলো ফুলে টমেটোর মতো হয়ে যায়।
ভুবনেশ্বরের আঞ্চলিক মেডিকেল গবেষণা কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উড়িষ্যায় ১ থেকে ৯ বছর বয়সী আরও ২৬ শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এটি নিজ থেকেই কমে যাওয়া বা সেলফ লিমিটিং একটি অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তবে এটি ‘খুবই সংক্রামক’ একটি রোগ বলে সতর্ক করেছেন তারা।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাত, মুখ ও পায়ের রোগ মূলত ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের হয়, তবে বড়রাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও অন্যান্য ভাইরাল রোগের মতো আইসোলেশন, বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর পরিমাণে তরল পান ও গরম পানি দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করলে ফোসকা ও র্যাশ থেকে সাময়িক নিরাময় পেতে পারেন রোগীরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বর ও ব্যথার ট্যাবলেট ও উপসর্গ অনুযায়ী অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
টমেটো ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে অন্যান্য শিশু ও বয়স্কদের মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে অন্তত ৫ থেকে ৭ দিন আইসোলেশনে থাকা প্রয়োজন। টমেটো ফ্লু প্রতিরোধের সেরা উপায় হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা।
এছাড়াও, আক্রান্ত শিশুর খেলনা, কাপড়, খাবার ও অন্যান্য উপকরণ সুস্থ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা আবশ্যক। এখন পর্যন্ত টমেটো ফ্লু প্রতিরোধের জন্য কোনো ওষুধ বা টিকা নেই।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, মানবদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করা সম্ভব। তবে এতে ২ থেকে ৪ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। এই রোগ মহামারিতে রূপান্তরিত হতে পারে কী না, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালানোর ওপর জোর দিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
উপসর্গ দেখা দেয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠানো যেতে পারে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৪
আপনার মতামত জানানঃ