দুই দশক ধরে নির্বিঘ্নে ধর্ষণসহ নানা যৌন অপরাধ করে আসছিলেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন পুলিশের এক কর্মকর্তা। শেষ পর্যন্ত তিনি ধরা পড়েছেন। অপরাধ স্বীকারও করেছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্রমিক ধর্ষককে গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। খবর এএফপির।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন৷ লন্ডনের পুলিশ বাহিনীকে অসদাচরণের মূলোৎপাটন এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
দুই দশক ধরে চলা নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই লন্ডন পুলিশের এক কর্মকর্তা নিজের অপরাধ স্বীকার করলেন৷ ৪৮ বছর বয়সি এই পুলিশ অফিসার ৪৯টি অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন৷ তার স্বীকার করা অপরাধের মধ্যে ২০টি ধর্ষণের ঘটনা ছাড়াও নির্যাতন এবং মিথ্যা কারণ দেখিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনাও রয়েছে৷
দীর্ঘদিন ধরে লন্ডন পুলিশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে৷
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অফিসার ডেভিড ক্যারিক তার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ভুক্তভোগীদের ভয় দেখিয়েছেন৷ তিনি পুলিশ সদস্য হওয়ায়, কেউ তার বিরুদ্ধে বলা কথা বিশ্বাস করবে না, এমন কথাও বলেছেন তিনি৷
ক্যারিকের ক্রমিক যৌন অপরাধের ঘটনাগুলো যুক্তরাজ্যবাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে ব্যাপকভাবে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের সরকার দেশটির বাহিনীগুলোতে থাকা এ ধরনের অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের মূলোৎপাটনের আহ্বান জানিয়েছে।
ক্যারিক লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার স্বীকারোক্তি পুলিশ বাহিনীটির ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
ক্যারিক ২০০১ সালে লন্ডন পুলিশে যোগ দেন৷ যেসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো ২০০৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ঘটেছে৷
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে তিনি অনলাইন ডেটিং অ্যাপ বা বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনে পরিচিত হতেন৷ সেখানে নিজের পুলিশ পরিচয় ব্যবহার করে তিনি ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতেন৷
প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা যসওয়ান্ত নারওয়াল জানান, এরপর ক্যারিক ‘সেসব নারীদের তিনি যৌন নিপীড়ণ এবং ধর্ষণের সুযোগ খুঁজতেন৷”
ক্যারিক এসব নারীদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও ধংস করে ফেলতেন৷ অনেকক তিনি তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটক করে রাখতেন এবং তাদের পোশাক, এমনকি ঘুমের সময়ও নিজের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷
Commissioner Sir Mark Rowley: I apologise to all of David Carrick’s victims.
We have failed. I’m sorry. He should not have been a police officer.
I have promised action. Integrity is our foundation – the Met will become ruthless at rooting out those who corrupt it.
— Metropolitan Police (@metpoliceuk) January 16, 2023
দুই বছর আগে বাহিনীটির অপর এক কর্মকর্তা এক তরুণীকে অপহরণের পর ধর্ষণ ও হত্যা করেছিলেন। এ ঘটনার ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি দেশটির পুলিশ। এখন ক্যারিক ইস্যুতে তারা আরও চাপে পড়ল।
ক্যারিকের স্বীকারোক্তির এক দিন পর লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার লুইসা রোলফ বলেন, তার (ক্যারিক) অপরাধ ভয়াবহ। এটা বিকৃত মানসিকতা। পুলিশি পেশার ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাবিষয়ক শুনানিতে লুইসা বলেন, ‘আমি সত্যিই আশা করছি যে এ ধরনের ঘটনা আর কখনো দেখতে হবে না।’
পার্লামেন্ট সদস্য ও বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সশস্ত্র শাখায় কর্মরত ছিলেন ৪৮ বছর বয়সী ক্যারিক। ২০২১ সালের শেষ দিকে অভিযোগ আসার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
সাধারণত একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিচারকাজ শেষ হওয়ার পরই পুলিশে অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়ে শুনানি হয়ে থাকে। কিন্তু দোষ স্বীকার করায় বাহিনীতে ক্যারিকের ঘটনার শুনানি দ্রুত সম্পন্ন হয়।
একই সঙ্গে তার অভূতপূর্ব অপরাধের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, যা সচরাচর দেখা যায় না।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মার্ক রাউলির প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী হাইয়েল জেনকিন্স পুলিশ কর্মকর্তা ক্যারিকের অপরাধকে ‘জঘন্য, লক্ষ্যভিত্তিক ও ইচ্ছাকৃত’ বলে অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য, ক্যারিক বাহিনীর শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কোনো আইনজীবীও নিয়োগ দেননি। চরম অসদাচরণের দায়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
আদালতে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের শুনানি শেষে ক্যারিকের সাজা ঘোষণা করা হবে।
এসডব্লিউএসএস/১৬১০
আপনার মতামত জানানঃ