ভারতে বসবাসকারী এক তরুণের ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার স্বজনদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের উত্তরকান্দি গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবির অধিকারী (২৫) নামের ওই তরুণ তার ফেসবুক আইডি থেকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট দেন। এটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পার্শ্ববর্তী বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলাগ্রামসহ আশপাশের মুসল্লিরা একত্র হয়ে আবিরের গ্রামের বাড়ি উত্তরকান্দি গ্রামের মাখন লাল অধিকারী, পলাশ অধিকারী ও সন্তোষ অধিকারীর বসতঘর ভাঙচুর করেন।
খবর পেয়ে কোটালীপাড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আবির অধিকারীর চাচাতো ভাই রঞ্জন অধিকারী বলেন, সাত বছর আগে কান্দি উচ্চবিদ্যালয় থেকে আবির এসএসসি পাস করে ভারতে চলে যান। তিন মাস আগে আবিরের মা ও ভাইবোন এবং গত সপ্তাহে তার বাবা অনাদী অধিকারী জায়গাজমি সব বিক্রি করে ভারতে চলে যান।
আবির অধিকারীর আরেক চাচাতো ভাই সৌরভ অধিকারী বলেন, আবির ফেসবুকে কী লিখেছেন, তা তারা জানেন না। গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ দুই-তিন শ লোক এসে তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। এই বাড়িতে পাঁচটি পরিবার বসবাস করছে। এখন তারা আতঙ্কে আছেন।
কোটালীপাড়া ওলামা পরিষদের প্রচার সম্পাদক বশির বিন সামসুদ্দিন বলেন, আবির অধিকারী ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে যে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন তা নিন্দনীয়। আবির অধিকারীর বাড়ির তিনটি পরিবারের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা একজন মুসলিম হিসেবে তিনি সমর্থন করেন না। তবে আবিরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান তিনি।
কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাননি। আবির ভারতে থাকার কারণে আপাতত তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, সংখ্যালঘুবান্ধব আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে একনাগাড়ে প্রায় সাড়ে ১৩ বছর ক্ষমতায় আছে। দেশে বরাবরই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও এখন মূলত রাজনৈতিক অস্থির অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এ ধরনের ঘটনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময় পরিবার ও মন্দির লুট হয়েছে ৩১৯টি। বসতবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৮৯১টি, অগ্নিসংযোগ হয়েছে ৫১৯টি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে ১৭৩টি। ঘরবাড়ি দখল হয়েছে ৫৭টি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ৫০টি এবং মন্দিরের ভূমি দখল হয়েছে ৫১টি। দখলের তৎপরতা ৯৮৪ একর ১২ শতাংশ। বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭২টি পরিবারকে। উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৪টি পরিবারকে এবং উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হয়েছে ৩৫ হাজার ৮১৮টি পরিবারকে।
দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৪৪৫টি পরিবারকে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশত্যাগে হুমকির শিকার ১৫ হাজার ১১৫টি পরিবার এবং নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯১টি পরিবার। সংঘবদ্ধ হামলা ৯৫৩টি। মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১২৮টি, প্রতিমা ভাঙচুর ৪৮১টি, প্রতিমা চুরি ৭২টি। অপহরণ করা হয়েছে ১২৭ জনকে এবং অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৭ জনকে। ৩৯ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৭ জন। ধর্ষণের পর ১৪ জন হত্যার শিকার হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, ৫৫ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৫২ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা করা হয়েছে ৪০ জনকে।
এসডব্লিউএসএস/১৮২৫
আপনার মতামত জানানঃ