সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) এবং এর বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ পুরানো এবং স্বাভাবিক হলেও, বাংলাদেশের জন্য এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়।
আওয়ামী লীগ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের শীতলতা প্রথম বোঝা যায় এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে। এর ফলে ঘরে বাইরে চাপে পড়ে যায় আওয়ামী লীগ। প্রকাশ্যে আসে ক্ষমতাসীন দলটির মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়। এরইমধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই সম্পর্কের অবনতি ঘটছে যুক্তরাষ্ট্র ও আওয়ামী লীগের।
বাংলাদেশ নিয়ে গত বছর কয়েকের তুলনায় বেশ চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে বেশ তৎপরই মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও প্রায় প্রতিদিনই তাগিদ দিতেন সুষ্ঠু নির্বাচনের। কেবল সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নয়, সর্বজন গ্রহণযোগ্যসহ বিশেষায়িত নানা আকাঙ্খা যোগ করেছেন। একথাও বলছেন যে সামনের নির্বাচন হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও কথা বলেছেন সমানে। জবাবদিহি ছাড়া র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই- এমন খাসকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পিটার হাস।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির ঠেকে যাওয়া দেওয়ালে যেন পিঠ হয়ে দাঁড়াতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। আজকের সম্মেলনকে ঘিরে বেশ তৎপর দেশটি। আওয়ামী লীগের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও ঘটছে।
নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার তদন্তের দাবি
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার রিপোর্টগুলো সম্পূর্ণরূপে তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। শুক্রবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত নিবিড়ভাবে’ পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে বিরোধী দল যখন বড় সমাবেশের আয়োজন করছে তখনই এমন বার্তা দিলো যুক্তরাষ্ট্র। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, জন কিরবি বাংলাদেশের সকল পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার রাজধানী ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় একজন নিহত এবং ৬০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এদিকে ভয়েস অফ আমেরিকা জানিয়েছে, শনিবার ঢাকায় বিএনপি যে মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে, তার পূর্বে গত এক মাসে হাজার হাজার বিএনপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এমন অবস্থায় কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিবেদনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কিরবি বলেন, ভয়-ভীতি, হয়রানি বা সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণে বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
তার ভাষায়, আমরা বাংলাদেশের সকল দলকে আইনের শাসনকে সম্মান করার জন্য এবং সহিংসতা থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা তাদের হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে দেখতে চাই। পাশাপাশি আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই যাতে কোনো দল বা প্রার্থীকে অন্য দলের কাছ থেকে হুমকি, উসকানি বা সহিংসতার শিকার হতে না হয়।
কিরবি বলেন, ওয়াশিংটন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সহিংসতার রিপোর্টগুলো সম্পূর্ণরূপে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
বন্ধুত্ব নষ্ট করবেন না : কাদের
এই আহ্বানের প্রতিউত্তরে বাংলাদেশের নির্বাচন ও আইনের শাসন নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট না করতে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গতকাল শুক্রবার সকালে ধানমণ্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের প্রথম প্রস্তুতি সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য বা হস্তক্ষেপ করবেন না। নির্বাচনি জালিয়াতি শুধু বাংলাদেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও হয়।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা ৬ জানুয়ারি আমেরিকার চেহারা দেখেছি। তাদের নির্বাচন এক পক্ষ মেনে নেয়নি, ফল মেনে নেয়নি। ন্যান্সি পেলোসি কীভাবে লুকিয়ে ছিল, সেই দৃশ্য আমরা দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাস শুটিংয়ের ঘটনা সাধারণ। প্রতিদিনই গুলিতে দুই, তিন বা পাঁচজন নিহত হচ্ছে। আর আপনি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছেন। আমাদের আদালতপাড়া নিয়ে কথা বলেন, আপনাদের ওখানে কী হচ্ছে? সবাই নিজের চেহারাটা আগে দেখুক।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা কারও হুকুম শুনবেন না। তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালে তাদের ভূমিকা দেখেছি। এতসব ঘটনা সত্ত্বেও আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য করে কারও কোনো লাভ হবে না। এগুলো সুসম্পর্কের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চায় বাংলাদেশ।’
এসডব্লিউএসএস/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ