ভারতের তেলেঙ্গানায় ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে একই গ্রামের ২০ বছর বয়সী যুবকের সাথে প্রেম করার সন্দেহে তার ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস
ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ, আনন্দ রেড্ডি বলেছেন, অভিযুক্ত একজন কৃষক। তার দুটি মেয়ে এবং একটি ছেলে রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে তিনি লক্ষ্য করেছেন দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার ছোট মেয়ে একই গ্রামের ভিন্ন জাতের এক যুবকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরা করছে এবং সন্দেহ করেছে যে সে তার সাথে প্রেম করতে পারে।
যখন তিনি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তখন তিনি যুবকের সাথে এই ধরনের কোনও সম্পর্ক অস্বীকার করেছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন যে এটি কেবল বন্ধুত্ব। কিন্তু বাবা তাকে সন্দেহ করতে থাকে এবং যুবকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরা করার বিরুদ্ধে তাকে সতর্ক করে দেয়।
ডিএসপি বলেন, মঙ্গলবার সকালে বাবা ও মেয়ের মধ্যে তুমুল কথা কাটাকাটি হয়। রাগের মাথায় তিনি একটি কুড়াল তুলেছিলেন এবং তাকে বারবার কুপিয়েছিলেন। যার ফলে তার তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়েছিল।
গত কয়েকদিন ধরে তিনি লক্ষ্য করেছেন দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার ছোট মেয়ে একই গ্রামের ভিন্ন জাতের এক যুবকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরা করছে এবং সন্দেহ করেছে যে সে তার সাথে প্রেম করতে পারে।
অপরাধ করার পর ওই ব্যক্তি থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। অবিলম্বে পুলিশ বাহিনী গ্রাম পরিদর্শন করেন এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেন।
তরুণীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ডিএসপি বলেন, তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আমরা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অধীনে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি এবং মামলাটি তদন্ত করছি।
এর আগে গতকাল ভারতের বিহারে ভিন্ন জাতের একজনকে বিয়ে করায় ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে তার পরিবার গুলি করে হত্যা করে।
ভারতের সমাজ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হলেও জাত-প্রথা নিয়ে আছে অনেক গোঁড়ামি। বর্ণের প্রভাবে হিন্দু সংস্কার এবং জন্মের সময় উচ্চবংশের সাথে নিন্মবংশের থাকে বিস্তর ফারাক।
মূলত প্রতিহিংসামূলক কর্মকান্ডের জন্য পরিবার, ছেলে এবং মেয়েকে হত্যা করার চেষ্টা করে। পরিবারের কাছে বিয়ের চেয়ে জাত-ধর্ম-বর্ণ তখন মূখ্য হয়ে যায়।
ভারতে ইদানিং যা দেখা গেছে তা হল বর্ণাশ্রম না মেনে নিজের জাতের বাইরে কেউ যদি বিয়ে করে তাহলে পরিবারের সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে এমনটি ধরে নেয়া হয়৷ তখন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লাগে৷ যেভাবেই হোক পরিবারের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এবং তা করা যাবে যদি মেয়েটিকে হত্যা করা হয়৷ এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে বাবা-ভাই, আত্মীয় স্বজনরা পর্যন্ত থাকে৷ কিন্তু অত্যন্ত আদরের কন্যা বা বোনকে হত্যার পর পরিবারের সম্মান কি আদৌ ফিরে আসে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্মান রক্ষার্থে খুন— অনার কিলিং। শব্দগুলো আর নতুন করে স্তম্ভিত করে দেয় না। মেয়েরা এখন এই শব্দগুলো শুধু নয়, এই মৃত্যুগুলোর সঙ্গেও পরিচিত। অনেক বছর হয়ে গেল এই নৃশংসতার, তাই মেয়েরাও বোধহয় এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তারাও জেনে গেছে যে যেকোনও সময়ে পরিবার, সমাজ সব জায়গা থেকে বীভৎসতম আঘাতটা তারা পেতে পারে। যত বড় চাকরিই করুক বা যত সহজ-সাধাসিধে একটা জীবনের স্বপ্নই দেখুক না কেন, জীবনটা যখনই নিজের হাতে নিতে চান, যেমনই হোক একটা নিজস্ব যাপনের চিন্তা করেন, তখনই মেয়েদের জীবনটাই একটা প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। বেঁচে থাকা, মরে যাওয়া সবই যেন অন্যের উপর নির্ভরশীল— বিশেষত পরিবারের পুরুষদের। অবশ্য মানসিকতাটা যেখানে পুরুষতান্ত্রিক, সেখানে পুরুষ, নারী নির্বিশেষে যে কেউই এই নির্যাতনে, এই হত্যায় শামিল হয়ে যান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০৫
আপনার মতামত জানানঃ