প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি একেবারে ঢেকে ফেলতে বা হোয়াইটওয়াশ করতে জিনজিয়াং, তিব্বত ও ইনার মঙ্গোলিয়ার মতো সমস্যাযুক্ত অঞ্চলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাব রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ব্যবহার করছে চীন। অস্ট্রেলিয়ার একটি সংস্থা প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘সামনের সারির প্রভাবশালীদের’ ভিডিওগুলোকে বেইজিংয়ের ‘প্রচার অস্ত্রাগার’ এর ক্রমবর্ধমান অংশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে চীনে জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর কমিউনিস্ট পার্টির নিপীড়ন আরও বেড়েছে। জিনজিয়াং, তিব্বত ও ইনার মঙ্গোলিয়ায় বড় মাত্রায় নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে জিনজিয়াংয়ে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। তবে চীন সরকার প্রায় ১০ লাখ মানুষকে পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এছাড়া ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, চরমপন্থা মোকাবেলা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শি জিনপিংয়ের আদেশে ‘চীনের গল্প ভালভাবে বলার’ জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালীদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে পরীক্ষা করা হয়েছে যে এটি একটি আরও বিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে, যা ঘটছে তা অস্বীকার করার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের ব্যবহার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘(প্রভাব বিস্তারকারীদের) সাদামাটা উপস্থাপনা নিখাঁদ অনুভূতি দিচ্ছে যে, চীনের সীমান্ত অঞ্চলগুলো সম্পর্কে বৈধতা ও স্বচ্ছতার বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে, যেটি অর্জনের জন্য ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে সরকারি সংবাদমাধ্যম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শি জিনপিংয়ের আদেশে ‘চীনের গল্প ভালভাবে বলার’ জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালীদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর জাতিসত্তার লোকজনের ওপর দেশটির কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বন্দিশিবিরে আটকে রেখে উইঘুর মুসলিমদের ওপর ভয়ংকর নির্যাতন চালাচ্ছে চীন। এ ছাড়া লাখ লাখ মানুষের ওপর নজরদারি করছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নেদারল্যান্ডসসহ বেশ কয়েকটি দেশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য বেইজিংকে দায়ী করে থাকে। তবে চীন জোরালোভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
গত বছরের গোড়াতে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা চীন সরকারদের বিরুদ্ধে উইঘুর, তিব্বতি এবং ফালুন গং বন্দীদের অঙ্গ কেটে বিক্রির অভিযোগ তুলেছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের নয়জন বিশেষ প্রতিবেদক এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনুসন্ধান, সাক্ষ্যগ্রহণ এবং চীনের সন্দেহজনকহারে উচ্চমাত্রার অঙ্গদাতার পরিসংখ্যান ঘেটে ভয়ঙ্কর এই অঙ্গ-পাচার বাজারের ওপর নতুন করে আলোকপাত করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার রক্ষাকারী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তারা চীনের ডিটেনশন ক্যাম্পে ফালুন গঙ অনুসারী, উইঘুর, তিব্বতি, মুসলিম ও খ্রিষ্টানসহ সংখ্যালঘুদের ‘অঙ্গ-অপসারণের’ অভিযোগগুলো নিয়ে ভীষণভাবে শঙ্কিত।
চীনের সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের অধিকার সীমিত হয়ে পড়ছে। মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ওঠে এসেছে এসব তথ্য।
মুসলিম বিধি-বিধান বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত অন্যান্য সব বিধানও কৌশলে মুছে ফেলার অপতৎপরতা ব্যাপকহারে চালানো হচ্ছে। মুসলিম পুরুষ ও নারীদের জন্মশাসন ও বন্ধ্যাত্ব করে দেয়া হচ্ছে।
চীন সরকারের জুলুম অত্যাচার থেকে বাঁচার লক্ষ্যে জিনজিয়াংয়ের প্রায় ২৫ লাখ অধিবাসী পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। নানা অজুহাতে উইঘুর মুসলিম নেতৃস্থানীয়দের জেল-জুলুম এমনকি মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে সরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৮
আপনার মতামত জানানঃ