প্রশান্ত মহাসাগরের আকাশে ভিন্গ্রহী একাধিক যান (ইউএফও) দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে বিমান নিয়ে উড়ে যাওয়া চালকদের একাংশ। ভিন্গ্রহী যান নিয়ে গবেষণা করা গবেষকের মতে, গত দু’মাস ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের আকাশে এই ভিন্গ্রহী যানগুলোকে দেখা যাচ্ছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, সাউথ ওয়েস্ট এবং হাওয়াইয়ান বিমান সংস্থা-সহ আরও বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থার বিমান চালকদের দাবি, তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আকাশে এই ধরনের একাধিক উড়ন্ত ভিন্গ্রহী যান দেখেছেন।
ভিন্গ্রহী যান চাক্ষুষ করা বিমান চালকদের মধ্যে এক জন মার্ক হুলসি। তার দাবি, ১৮ আগস্ট লস এঞ্জেলেস্ উপকূলে একটি বিমান নিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বুঝতে পারেন তার বিমানের উত্তরে বেশ কয়েকটি অন্য বিমান ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই বিমানগুলি অনেক বেশি উচ্চতায় বৃত্তাকার পথে ঘুরছিল বলেও মার্কের দাবি।
কিন্তু ওই আকাশে অন্য বিমান ওড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে কন্ট্রোল রুমের তরফে জানানো হয় যে, তাদের কাছে ওই আকাশে অন্য বিমান থাকার কোনও খবর নেই।
যে বিমান চালকরা ভিন্গ্রহী যান দেখেছেন বলে দাবি করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতার কথা ক্যামেরাবন্দি করেছেন প্রাক্তন এফবিআই কর্তা বেন হ্যানসেন। এই বিষয়ে তিনি ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রেকর্ডিং’ সংগ্রহ করে গবেষণা চালাচ্ছেন বলেও দাবি করেছেন।
মার্কের দাবি, ২৩ মিনিটের মধ্যে তিনি সাতটি ভিন্গ্রহী যান স্বচক্ষে দেখেছেন। এই বিমানগুলো তার বিমানের ৫ থেকে ১০ হাজার ফুট উপরে ছিল বলেও তিনি জানিয়েছেন।
তার দাবি, ওই বিমানগুলো থেকে অদ্ভুত আলোর ছটা বেরোচ্ছিল।
হুলসি মন্তব্য করেন, ‘‘আমি জীবনে অনেক বিমান চালিয়েছি। নৌবাহিনীর এফ-১৮ বিমানও চালিয়েছি। কিন্তু জীবনে এ রকম কোনও কিছু দেখিনি।’’
আমি জীবনে অনেক বিমান চালিয়েছি। নৌবাহিনীর এফ-১৮ বিমানও চালিয়েছি। কিন্তু জীবনে এ রকম কোনও কিছু দেখিনি।
দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের মনে প্রশ্ন, আসলেই কি ভিনগ্রহবাসী বা এলিয়েনদের দেখা মিলবে? অনেকেই এলিয়েনদের খুঁজে পাওয়া কিংবা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিছকই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বিষয় বলেই মনে করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে ভিন্ন কথা।
মহাকাশ, মহাজাগতিক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই, জানার চেষ্টারও শেষ নেই মানুষের। নানা সময়ে নানা কিছু তাই সামনে আসে আমাদের।
পৃথিবীর বাইরে কি কোনও জীবন রয়েছে? বিজ্ঞানীরা ভিনগ্রহে জীবনের অনুসন্ধান করেই চলেছেন নিরন্তর। সৌরজগতের চৌহদ্দির বাইরে অন্য সভ্যতার খোঁজ করতে উঠে পড়ে লেগেছে নাসা।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেক মানুষ মাঝেমধ্যে দাবি করে যে তাদের সঙ্গে এলিয়েনের দেখা হয়েছে, কিংবা এলিয়েনরা এসে তাদের কোথাও ধরে নিয়ে গেছে, কিংবা অবিশ্বাস্য অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে। অনেক গুপ্তহত্যাকাণ্ডকেও এলিয়েনের কাজ বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকেই ইউএফও বা unidentified flying object বা উড়ন্ত চাকতি দেখেছেন বলে দাবি করেন। এলিয়েনের সঙ্গে মানুষের সাক্ষাৎ ঘটার ব্যাপারটা যে পুরোপুরি বানানো, সেটা মানতে রাজি নন অনেকে। এই অনেকের মধ্যে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও আছেন। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সাইকিয়াট্রির প্রফেসর জন ম্যাক বিশ্বাস করতেন, এলিয়েনরা আছে এবং তারা মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করে। এ নিয়ে অ্যাবডাকশান: হিউম্যান এনকাউন্টার উইথ এলিয়েনস নামে একটা ঢাউস বইও লিখেছিলেন তিনি। বইটাতে যেসব ঘটনা উল্লেখ করেছেন, সেগুলো সবই মানুষের সঙ্গে এলিয়েনের সংযোগ, সংঘাত ইত্যাদি নিয়ে এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে এগুলো সত্য ঘটনা।
কিন্তু বিশ্বাস আর প্রমাণ এক জিনিস নয়। প্রমাণ করা না গেলে সেটা আর যা–ই হোক, বিজ্ঞান নয়। কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করলেও কিংবা জন ম্যাকের মতো পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী–লেখক বললেও প্রমাণ না পেলে এলিয়েনকে সত্য বলে স্বীকৃতি দেওয়া বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা এখনো কোনো ইউএফওর প্রমাণ পাননি, খুঁজে পাননি এলিয়েনের অস্তিত্ব।
কিন্তু এত বড় মহাবিশ্বের এত এত নক্ষত্রের কোটি কোটি গ্রহ-উপগ্রহের মধ্যে আমাদের পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও কি প্রাণের উদ্ভব ঘটেনি? মহাবিশ্বে পৃথিবী কি আসলেই একা? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা এলিয়েনের অস্তিত্ব খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন অনেক অনেক বছর থেকে, যখন থেকে মহাবিশ্বের স্বরূপ বুঝতে পেরেছেন, তখন থেকে।
কেউ কেউ ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, এলিয়েনরা মানুষের চেয়ে এত বেশি চালাক যে মানুষের সাধ্য নেই তাদের খুঁজে বের করে। আবার কেউ কেউ আরও এক কাঠি বাড়িয়ে বলে ফেলেন, এলিয়েনরা এই পৃথিবীতেই আছে মানুষের বেশে, হয়তো আপনার আশপাশেই ঘুরছে, আপনি চিনতে পারছেন না। কিন্তু আপনি যদি বিজ্ঞান চিন্তা করেন, তাহলে আপনি প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছুই বিশ্বাস করবেন না। কারণ, যা প্রমাণ করা যায় না, তা বিজ্ঞান নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০০
আপনার মতামত জানানঃ