নাসা’র ওসিরিস-রেক্স (OSIRIS-REx) মিশন ২০২০ সালে বেন্নু এস্টেরয়েড (Asteroid) থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। এই নমুনাগুলো পৃথিবীতে ফেরত আসে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। বিজ্ঞানীরা এই নমুনাগুলো বিশ্লেষণ করে খুঁজে পান যে, এগুলোতে রয়েছে পানির সঙ্গে মিলিত অর্গানিক এবং জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ। এই ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, মহাকাশে প্রাণের উপাদানসমূহ তৈরি হয়ে থাকতে পারে, যা পৃথিবীতে প্রাণের উত্থানকেও প্রভাবিত করেছে।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, বেন্নু এস্টেরয়েড অ্যামিনো অ্যাসিড, নিউক্লিওবেস এবং জীবনের জন্য অপরিহার্য অন্যান্য অর্গানিক উপাদান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২০টি প্রোটিন নির্মাণকারী অ্যামিনো অ্যাসিডের ১৪টি এবং ১৯টি অ-প্রোটিন অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যেগুলি কিছুটা বিরল। এ ছাড়াও, বেন্নু থেকে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন ডিএনএ এবং আরএনএ এর গঠনমূলক উপাদানগুলো, যা পৃথিবীর জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই মহাকাশ শিলার ধূলিকণায় অ্যামিনো অ্যাসিড ও নিউক্লিওবেসের অস্তিত্ব রয়েছে, যা প্রোটিন ও ডিএনএ গঠনের মূল উপাদান। বিজ্ঞানীদের মতে, এই আবিষ্কার পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে বিদ্যমান তত্ত্বকে আরও জোরালো করছে। তারা মনে করছেন, বিলিয়ন বছর আগে এমন গ্রহাণুগুলো পৃথিবীতে আঘাত হেনে পানি ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করেছিল। এই একই প্রক্রিয়া আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহেও ঘটতে পারে।
নতুন গবেষণায় আরও জানা গেছে, বেন্নু গ্রহাণুতে প্রচুর কার্বন ও নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ রয়েছে, যা প্রাণের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া, গ্রহাণুর গঠন বিশ্লেষণে বিভিন্ন খনিজ ও লবণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে কোনো একসময় এতে জলীয় পরিবেশ ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি শুধু বেন্নু সম্পর্কেই নতুন তথ্য দিচ্ছে না, বরং আমাদের সৌরজগতের ইতিহাস ও প্রাণের সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কেও গভীরতর ধারণা দিচ্ছে।
এই গবেষণা ভবিষ্যতে আরও বড় প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে—পৃথিবীতে প্রাণ কিভাবে এল? সৌরজগতের অন্য কোথাও কি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে? বিজ্ঞানীরা এখনো বেন্নুর নমুনা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা আগামী কয়েক দশক ধরে নতুন নতুন চমকপ্রদ তথ্য এনে দিতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ