হিন্দুদের পর এ বার পাকিস্তানে ধারাবাহিক ভাবে শিখদের ধর্মান্তরের অভিযোগ উঠেছে। এবার অভিযোগ করা হয়েছে, আগস্ট মাসে খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে এক শিখ নারী শিক্ষককে অপহরণ করে মুসলিম হতে বাধ্য করা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্তেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের বৈঠকে বলেন, ‘এমন ঘটনা মর্মান্তিক ও গুরুতর।’
পাকিস্তানি সংবাদপত্র ‘ট্রিবিউন’ কয়েক বছর আগেই একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের হাঙ্গু জেলায় খুনের ভয় দেখিয়ে শিখদের গণহারে ধর্মান্তরে বাধ্য করা হচ্ছে।
পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহ এ নিয়ে সরব হওয়ার পরে কূটনৈতিক স্তরে প্রতিবাদ জানিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
কয়েক মাস আগেই পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে দুই হিন্দু নাবালিকা বোনকে অপহরণ করে, ধর্মান্তর করিয়ে, জোর করে বিয়ে দেওয়ানোর অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় একটি মুসলিম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পাকিস্তানি সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বার বার এমন ঘটনা ঘটলেও নীরব থাকে পুলিশ প্রশাসন।
এ বার শিখ শিক্ষিকাকে অপহরণ এবং মুসলিম হতে বাধ্য করার অভিযোগ ঘিরে ইতোমধ্যেই প্রতিবাদে নেমে এসেছে বিভিন্ন শিখ সংগঠন।
পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা ভয়াবহ নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বেঁচে আছে। বিশেষত হিন্দুরা। দেশটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য ধীরে ধীরে নরক হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর চলে অকথ্য অত্যাচার। অধিকাংশ সময়ই তা প্রকাশ্যে না এলেও মাঝেমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায় পাকিস্তানে উগ্র মৌলবাদীরা হিন্দুদের ওপর কী পরিমাণে অত্যাচার চালাচ্ছে। হিন্দুরা ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না।
সম্প্রতি পাকিস্তানে খ্রিষ্টান, শিখ, হিন্দু বা আহমদিয়াদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যে কী চরম দুর্দশা ও নির্যাতনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, তা নিয়ে একটি তীব্র সমালোচনামূলক রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। বাস্তব জীবন থেকে একের পর এক উদাহরণ তুলে ধরে তাঁরা দেখিয়েছেন, কীভাবে সেখানে সংখ্যালঘু সমাজের নারী বা মেয়েশিশুরা ধর্ষণ ও অপহরণের শিকার হচ্ছেন।
পাকিস্তানে হিন্দু ও খ্রিস্টান গোষ্ঠীগুলির পরিস্থিতি সাধারণভাবে খারাপ, তবে এই সম্প্রদায়ের মহিলারা কর্তৃপক্ষ, রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় দল, সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠদের বৈষম্যমূলক মনোভাবের সবচেয়ে বেশি শিকার। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারী ও মেয়েদের অপহরণ করা হয়, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়, জোরপূর্বক বিয়ে করা হয় এবং নির্যাতন করা হয় এবং তাদের পরিবার আইনি উপায় ব্যবহার করে এই অপরাধগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
যদিও অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, জোরপূর্বক বিবাহ এবং নির্যাতন ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারী ও মেয়েদের ভাগ্য প্রায়শই সিলমোহর করা হয় কারণ বিদ্যমান আইন বা এই জাতীয় মামলাগুলি পরিচালনা করা কোনও আইনি উপায় অনুপলব্ধ বা অকার্যকর বলে মনে করে৷
জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ এবং বিয়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ পাকিস্তানে একটি প্রধান সমস্যা। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই খ্রিস্টান এবং হিন্দু মেয়ে এবং যুবতী মহিলা, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক বয়স্ক মুসলিম পুরুষদের সাথে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়।
পাকিস্তানে নারীদের দুর্দশা প্রসঙ্গে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ২০২১ সালের প্রথমার্ধে দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশে প্রায় ৬৭৫৪ জন নারীকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৯০ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, ৩৭২১ জনকে নির্যাতন করা হয়েছে যেখানে ৭৫২ জন শিশু।
বিশেষ করে সিন্ধু প্রদেশে, হিন্দু মহিলারা যারা খুব সামান্য পরিমাণে কাজ করে, তারা সামন্ত সমাজের শিকার। তারা ক্ষেতে শ্রমের জন্য জমির মালিকদের দেওয়া ঋণে ঋণী থাকে। সিন্ধুর অধিকাংশ বন্ধন শ্রমিক হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং বহু শতাব্দী ধরে। বাদিন, মিরপুখাস, সাংঘর, উমর কোট এবং থারপারকার জেলায়, হিন্দু নারীরা তাদের প্রভুদের দাবিকৃত ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং ঘৃণার কারণে দাসত্ব করত। তারা অপহরণ, ধর্ষণ, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন, বাস্তুচ্যুত ও হত্যার শিকার হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৩৫
আপনার মতামত জানানঃ