কুমারীত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় নববধূকে ত্যাগ করেছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। শুধু ত্যাগ করেই থামেননি তারা, ঘটনার বিচার চাইতে পঞ্চায়েতে চলেছে বিচারপর্ব! পঞ্চায়েতের বিচারে মেয়েটি এবং তার পরিবারকে করা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকার জরিমানা।
সম্প্রতি ভারতের রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
গত ১১ মে ভিলওয়ারা শহরের বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সি ওই মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর রাজস্থানের বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের ‘কুকড়ি’ রীতি মেনে তার কুমারীত্ব পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসে ওই নববধূর। আর তা নিয়েই বাঁধে যত বিপত্তি।
এ ঘটনায় ছেলের পরিবার স্থানীয় পঞ্চায়েতে অভিযোগ করেন। পঞ্চায়েতের বিচারে মেয়েটি এবং তার পরিবারকে ১০ লাখ টাকার জরিমানা করা হয়।
এবিষয় ওই নববধূর স্বামী, শ্বশুরসহ পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মেয়ের পরিবার। পুলিশ এ বিষয় তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন থানার ইনচার্জ আইয়ুব খান।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, রাজেস্থানের এক বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে কুকড়ি প্রথার প্রচলন আছে। এই প্রথায় বিয়ের প্রথম রাতে স্বামীর সঙ্গে শারীরিক মিলনের পর সাদা চাদরের উপর যদি মেয়েটির রক্তের দাগ লাগে, তবেই তার সতীত্বের প্রমাণ মিলবে। আর শুধু তা-ই নয়, সেই চাদরটি সমাজের আর পাঁচ জনের সামনেও প্রদর্শনও করা হয়। কুমারীত্বের প্রমাণ না দিতে পারলে মেয়েটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। না হলে মেয়েটির বাড়ির লোকেদের কাছ থেকে আরো বেশি যৌতুক আদায় করা হয়।
পুলিশি জেরায় জানা গিয়েছে, বিয়ের আগে পাড়ার এক যুবক মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিল। বিষয়টি জানতে পেরে স্বামী ও শাশুড়ি তাকে মারধরও করেন। এরপর শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে বাগোরের ভাদু মাতা মন্দিরে সমিতির পঞ্চায়েত ডাকা হয়।
১৮ মে পঞ্চায়েতে সভায় মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা জানান যে, মেয়েটিকে যে ধর্ষণ করা হয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সুভাষনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ৩১ মে আবার বসে পঞ্চায়েত সভা। সে দিন কুকড়ি প্রথার নামে মেয়েটিকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, নারীত্বের সাথে যেমন সতীত্বের সম্পর্ক, পুরুষত্বের সাথে তাহলে কিসের সম্পর্ক? সতীত্ব শব্দটির পুরুষবাচক কোন শব্দ নাই! কেননা, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর একগামিতা চায়, পুরুষের না! পুরুষের বহুগামিতা নিয়ে সমাজে যতখানি অস্বস্তি আছে, তা ঐ নারীর একগামিতা রক্ষা করতে না পারার ভয় থেকেই। এই অস্বস্তির বাইরে আসলে কোন আপত্তি বা বাঁধাও নেই। বরং, যৌন সক্ষমতা যেহেতু পুরুষের সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য বা সবচেয়ে বড় পুরুষত্ব, ফলে বহুগামি পুরুষও তার পুরুষত্ব নিয়ে গর্বে ভোগে! সমাজ থেকে স্বৈরাচার পুরুষতন্ত্রের অবসান না হলে নারীকে এভাবেই নানা পরীক্ষার মাঝে বেঁচে থাকতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৮
আপনার মতামত জানানঃ